ন্যায়দর্শনের অনুমানের অবয়ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ন্যায় অনুমানের অবয়ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ন্যায় অনুমানের অবয়ব কীরূপ?
অথবা, নৈয়ায়িকদের ন্যায় অনুমানের অবয়ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আম্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনের মূল ও প্রধান উপজীব্য বিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব। নৈয়ায়িকরা জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় বলেছেন প্রমাণ চার প্রকার। যথা : প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ। নিয়ে অনুমান সম্পর্কে ন্যায় মতবাদ আলোচনা করা হলো :
অনুমানের অবয়ব (The constituents of inference) : কোন একটি বিষয়কে প্রত্যক্ষ করে সেই প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভিত্তিতে অপর একটি অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার প্রক্রিয়াকে অনুমান বলে। যে বাক্যগুলো দ্বারা অনুমান সাধিত হয় সেই বাক্যগুলোকে অনুমানের অবয়ব বলা হয়। নৈয়ায়িকদের মতে, যে কোন অনুমানে তিনটি পদ থাকবে।
যথা- সাধ্য (Major); পক্ষ (Minor), হেতু বা লিঙ্গ বা সাধন (Middle)। যা অনুমিত হয় তা সাধ্য, যার মধ্যে সাধ্যের অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তা পক্ষ এবং যে জিনিসের প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে অনুমান করা হয় তা হেতু বা লিঙ্গ বা সাধন পদ।
উদাহরণ : ঐ পর্বতে ধূম আছে।”
যেখানে যেখানে ধূম আছে সেখানে সেখানে অগ্নি আছে। ঐ পর্বতে অগ্নি আছে। উপর্যুক্ত অনুমানে অগ্নি হলো সাধ্য, কারণ ঐ অনুমানে অগ্নি অনুমিত হয়েছে। পর্বত হলো পক্ষ, কারণ পর্বতের মধ্যে অগ্নির অস্তিত্ব অনুমান করা হয়েছে আর ধূম হলো হেতু কারণ ধূমের ভিত্তিতে অগ্নিকে অনুমান করা হয়েছে। পাশ্চাত্য যুক্তিবিজ্ঞানীরাও প্রত্যেক ন্যায় অনুমানে সাধ্য, পক্ষ ও হেতু এ তিনটি পদের অস্তিত্ব স্বীকার করেন। নৈয়ায়িকদের মতে, প্রত্যেক অনুমানে অন্তত তিনটি বচন থাকবে। এ তিনটি বচন নিরপেক্ষ হবে এবং সদর্থক বা নঞর্থক উভয়ই হতে পারে। যেভাবে সাধারণত অনুমান করা হয় এবং উপর্যুক্ত দৃষ্টান্তে আমরা যেভাবে অনুমান করছি তা হতে দেখা যায়- প্রথমে বচনে পক্ষ (পর্বত) হেতুর (ধূমের) প্রত্যক্ষ, দ্বিতীয় বচনে হেতুর (ধূমের) সঙ্গে সাধ্যের (অগ্নির) সার্বিক সম্পর্ক স্মরণ এবং তৃতীয় বচনে (পর্বত) সাধ্যের (অগ্নির) অস্তিত্ব অনুমান করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ন্যায়দর্শনের জ্ঞানতত্ত্বে অনুমান সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা ভারতীয় দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূলত ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত ন্যায়দর্শনের অনুমান সম্পর্কিত আলোচনায় সে কথাই প্রমাণিত হয়।