ন্যায়দর্শনে ব্যাপ্তিকে জানার উপায় হিসেবে তর্ক সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ন্যায় মতে তর্ক সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, তর্ক ব্যাখ্যা কর।
অথবা, তর্ক বলতে নৈয়ায়িকরা কী বুঝান?
অথবা, ন্যায় দর্শন অনুসারে তর্ক কী?
অথবা, ন্যায় দর্শনে তর্ক বলতে কী বুঝায়?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আন্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যাপ্তি। কারণ অনুমান পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ এবং মূলভিত্তি হলো ব্যাপ্তি। নৈয়ায়িকদের মতে, সাধ্য ও হেতুর ব্যতিক্রমহীন সহ-উপস্থিতির সম্পর্ককে ব্যাপ্তি বলে। নৈয়ায়িকদের মতে অবাধ
অভিজ্ঞতাই ব্যাপ্তি নির্ণয়ের প্রকৃষ্ট উপায়। নৈয়ায়িকদের মতে ছয়টি বিষয়ের দ্বারা ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়। যথা : ১.
অন্বয় পদ্ধতি; ২. ব্যতিরেকী পদ্ধতি; ৩. ব্যভিচারগ্রহ; ৪. উপাধি-নিরসন; ৫. তর্ক এবং ৬. সামান্য-লক্ষণ প্রত্যক্ষ।
তর্ক : নৈয়ায়িকগণ উপাধি-নিরসন পদ্ধতির সংশয় দূরীকরণের জন্য ‘তর্ক’-এর সাহায্য গ্রহণ করেন। তর্ক হলো পরোক্ষ পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে প্রতিপাদ্য বিষয়ের বিরুদ্ধ বচনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন দ্বারা প্রতিপাদ্য বিষয়কে নিষ্পন্ন করা হয় তাকেই তর্ক বলে। যেমন- ‘সকল ধূমবান বস্তুই অগ্নিমান’-এ বচন যদি মিথ্যা হয় তবে এর বিরুদ্ধ বচন ‘কোন কোন ধূমবান বস্তু অগ্নিমান নয়’-এটি নিশ্চয় সত্য হবে অর্থাৎ অগ্নি ছাড়াও ধূম থাকতে পারে। কিন্তু আমরা জানি অগ্নিই ধূমের একমাত্র কারণ। যদি অগ্নি ছাড়াও ধূম থাকতে পারে তবে কারণ ছাড়াও কার্য ঘটতে পারে-এ কথা বিশ্বাস করতে হবে।
কিন্তু এ অনুমান স্বর্বজনস্বীকৃত কার্যকারণ নিয়মের বিরোধী বলে গ্রহণীয় নয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি সম্পর্কিত আলোচনা ভারতীয় দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ। মূলত ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি সম্পর্কিত আলোচনায় সে কথাই প্রমাণিত হয়।