অথবা, ব্যাপ্তিকে কী কী ভাবে জানা যায়?
অথবা, ন্যায় মতে ব্যাপ্তিকে কী কী ভাবে জানা যায়?
অথবা, ব্যাপ্তিকে কি জানা যায়?
অথবা, ব্যাপ্তিকে জানার উপায় আছে কী?
অথবা, ‘ব্যাপ্তিকে জানার উপায়গুলো লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আন্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যাপ্তি। কারণ
অনুমান পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ এবং মূলভিত্তি হলো ব্যাপ্তি।
ব্যাপ্তিকে জানার উপায় : নৈয়ায়িকদের মতে, সাধ্য ও হেতুর ব্যতিক্রমহীন সহ-উপস্থিতির সম্পর্ককে ব্যাপ্তি বলে। নৈয়ায়িকদের মতে অবাধ অভিজ্ঞতাই ব্যাপ্তি নির্ণয়ের প্রকৃষ্ট উপায়। নৈয়ায়িকগণ বৌদ্ধ-বর্ণিত ব্যাপ্তি নির্ণয়ের পন্থাকে স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন, অভিজ্ঞতাপূর্ব কার্য কারণ বা তাদাত্ম্য নীতি জাতীয় কোন নীতির সাহায্যে ব্যাপ্তি জ্ঞান সম্ভব নয়। নৈয়ায়িকগণ ব্যাপ্তি নির্ণয়ে বৈদান্তিকদের যে অভিমত সে অভিমতই গ্রহণ করেন। তবে ব্যাপ্তি নির্ণয়ে বৈদান্তিকগণ যেখানে কেবল অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করেন, নৈয়ায়িকগণ তা করেন না, তাঁরা অবাধ অভিজ্ঞতাকে তর্ক ও সামান্য প্রত্যক্ষের দ্বারা সমর্থন করেন। নৈয়ায়িকদের মতে ছয়টি বিষয়ের দ্বারা ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়। যথা :
১. অন্বয় পদ্ধতি;
২. ব্যতিরেকী পদ্ধতি;
৩. ব্যভিচারগ্রহ;
৪. উপাধি-নিরসন;
৫. তর্ক এবং
৬. সামান্য লক্ষণ প্রত্যক্ষ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি সম্পর্কিত আলোচনা ভারতীয় দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ। মূলত ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি সম্পর্কিত আলোচনায় সে কথাই প্রমাণিত হয়।