অথবা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় বৈদিক মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় দার্শনিকদের বৈদিক যুক্তিটি কী?
অথবা, নৈয়ায়িকরা কীভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণে বৈদিক যুক্তির প্রয়োগ করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ন্যায়সূত্র’ ন্যায়দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব, জীবাত্মার স্বরূপ ও যুক্তিতত্ত্ব এবং ঈশ্বরতত্ত্ব। নৈয়ায়িকগণ ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একাধিক যুক্তি প্রদর্শন করেন। উদয়নাচার্যের ‘ন্যায় কুসুমাঞ্জলি’গ্রন্থে এ যুক্তিসমূহ উপস্থাপিত হয়েছে। নিম্নে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় নৈতিক যুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
বৈদিক যুক্তি : ন্যায় দার্শনিকদের মতে, বেদের সাহায্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়। তাঁদের মতে, বেদ হলো একটি অভ্রান্ত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রন্থ এবং কোন মানুষের পক্ষে অভ্রান্ত বেদ রচনা করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ হলো অসম্পূর্ণ। তাহলে বেদের রচয়িতা এমন কেউ হবেন যিনি সম্পূর্ণ ও সর্বজ্ঞা। বেদে অনেক অতীন্দ্রিয় ও অলৌকিক বিষয়ের উল্লেখ আছে যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। সুতরাং বেদের রচয়িতা স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা ঈশ্বর। অতএব ঈশ্বর অস্তিত্বশীল। নৈয়ায়িকেরা বলেন, আমরা বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস করি বলেই যেমন বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করি, তেমনি বেদের রচয়িতাকে বিশ্বাস করি বলেই বেদকে বিশ্বাস করি। কোন মানুষের পক্ষে অভ্রান্ত বেদ রচনা করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ অসম্পূর্ণ, তাই মানুষের ভুলত্রুটি থাকবেই। সুতরাং, বেদের রচয়িতা এমন কেউ হবেন, যিনি সম্পূর্ণ এবং সর্বজ্ঞ। এ সম্পূর্ণ এবং সর্বজ্ঞ পুরুষই ঈশ্বর। সুতরাং সর্বজ্ঞ ঈশ্বরকেই বেদের রচয়িতা বলে স্বীকার করতে হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৈয়ায়িকদের ঈশ্বরতত্ত্বের আলোচনা ভারতীয় দর্শনের অমূল্য সম্পদ। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁদের যুক্তিগুলো এ কথাই প্রমাণ করে যে, ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্তবাদী দর্শন নয়, বরং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ দৃষ্টিতে ন্যায়দর্শনের ঈশ্বরতত্ত্ব গুরুত্বের দাবীদার এবং একটি সন্তোষজনক মতবাদ।