ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে নৈয়ায়িকদের নৈতিক যুক্তি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় নৈতিক মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে নৈয়ায়িকদের নৈতিক যুক্তিটি কী?
অথবা, নৈয়ায়িকরা কীভাবে নৈতিক যুক্তির সাহায্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব, জীবাত্মার স্বরূপ ও যুক্তিতত্ত্ব এবং ঈশ্বরতত্ত্ব। নৈয়ায়িকগণ ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একাধিক যুক্তি প্রদর্শন করেন। উদয়নাচার্যের ‘ন্যায় কুসুমাঞ্জলি’ গ্রন্থে এ যুক্তিসমূহ উপস্থাপিত হয়েছে। নিম্নে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ন্যায় নৈতিক যুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
নৈতিক যুক্তি : এ জগতে আমরা বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম অবস্থা দেখতে পাই। কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র, কেউ সুখী, কেউ অসুখী, কেউ পণ্ডিত আবার কেউ মূর্খ। এর কারণ হলো আমাদের অদৃষ্ট। অর্থাৎ আমাদের এ জীবনে বা পূর্বজন্মে কৃত কর্মের ফল। প্রত্যেকে আপন কর্মফল ভোগ করতে বাধ্য। এ হলো নৈতিক নিয়মের অলঙ্ঘনীয় নিয়ম। অদৃষ্ট হলো পাপপুণ্যের সমষ্টি। এ অদৃষ্ট অচেতন। কাজেই অচেতন অদৃষ্টের দ্বারা পাপের ফলে দুঃখ এবং পুণ্যের ফলে সুখ উৎপাদিত হতে পারে না। জীব স্বল্পজ্ঞানী বিধায় সে অদৃষ্টের নিয়ন্তা হতে পারে না। সুতরাং অনুমান করা যেতে পারে এমন এক সর্বজ্ঞা ও সর্বশক্তিমান কর্তা আছে যিনি অদৃষ্টকে পরিচালনা করেন এবং জীবের কর্মানুযায়ী ফলভোগের ব্যবস্থা করেন। এ সর্বজ্ঞা ও সর্বশক্তিমান কর্তাই হলেন ঈশ্বর। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টও (Immanuel Kant) এ নৈতিক যুক্তির সাহায্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৈয়ায়িকদের ঈশ্বরতত্ত্বের আলোচনা ভারতীয় দর্শনের অমূল্য সম্পদ। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁদের যুক্তিগুলো এ কথাই প্রমাণ করে যে, ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্তবাদী দর্শন নয়, বরং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ দৃষ্টিতে ন্যায়দর্শনের ঈশ্বরতত্ত্ব গুরুত্বের দাবিদার এবং একটি সন্তোষজনক মতবাদ।