যোগদর্শনের অসম্প্ৰজ্ঞাত যোগ ব্যাখ্যা কর।

অথবা, যোগ মতে অসম্প্ৰজ্ঞাত যোগ কী?
অথবা, অসম্প্ৰজ্ঞাত যোগ বলতে কী বুঝ?
অথবা, যোগ দর্শন মতে, অসম্প্ৰজ্ঞাত যোগ সম্পর্কে লিখ।
‘উত্তর৷ ভূমিকা :
মহর্ষি পতঞ্জলি ‘যোগদর্শনের’ প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। পতঞ্জলির নামানুসারে ‘যোগদর্শনকে’ পাতঞ্জলদর্শনও বলা হয়। যোগদর্শনের আদিমগ্রন্থ হলো ‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জল সূত্র’। বেদব্যাস রচিত ‘যোগভাষ্য’ যোগসূত্রের একটি মূল্যবান ভাষ্য। যোগদর্শন চারি পাদে বা অধ্যায়ে বিভক্ত। আত্মা ও অধ্যাত্মবিষয়ের সাক্ষাৎ উপলব্ধির
জন্য যোগের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা বেদে, উপনিষদে। চিত্তের ক্ষিপ্ত, মূঢ় এবং বিক্ষিপ্ত এ তিন অবস্থা যোগ সাধনার উপযোগী নয়। কেবল একাগ্র ও নিরুদ্ধ অবস্থায় যোগ সাধনা সম্ভব এবং এ দুই অবস্থা মোক্ষ লাভের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। প্রকৃতপক্ষে নিরুদ্ধ অবস্থাই যোগ সাধনার প্রকৃত অবস্থা। যোগ বা সমাধি প্রধানত দুই প্রকার। যথা : ১. সম্প্ৰজ্ঞাত, ২. অসম্প্ৰজ্ঞাত।
অসম্প্ৰজ্ঞাত যোগ: চিত্তের নিরুদ্ধ অবস্থায় যে সমাধি হয় তাই অসম্প্ৰজ্ঞাত সমাধি। অসম্প্ৰজ্ঞাত সমাধিতে চিত্তের সকল প্রকার বৃত্তি নিরুদ্ধ হয়। এমনকি বিবেকজ্ঞানও রহিত হয়। তবে এ অবস্থা অজ্ঞান বা অচৈতন্যের অবস্থা নয়; এতে বিষয় জ্ঞান রহিত হয় বটে, কিন্তু শুদ্ধ আত্মজ্ঞান থাকে। এ আত্মজ্ঞানই মুক্তির কারণ। অসম্প্রজ্ঞাত সমাধির স্তরে আত্মা প্রকৃতির বন্ধন হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয় এবং স্বরূপে অবস্থান করে এ সমাধিতে কোন রকমের অবলম্বন থাকে না বলে একে নিরালম্ব সমাধিও বলা হয়। প্রকৃত সমাধি বলতে অসম্প্ৰজ্ঞাত সমাধিকেই বুঝায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যোগাচার্যগণ যোগ সাধনার দ্বারা যোগীর চিত্তের মলিনতা এবং অশুদ্ধতা দূর হয় বলে মনে করেন। যোগশাস্ত্রকার যম, নিয়ম, আসনাদির অনুশীলনের মাধ্যমে চিত্তের যে অশুদ্ধি, ক্ষয় ও মালিন্য দূর, করার কথা বলেছেন। আত্মসাক্ষাৎকারের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা সব ভারতীয় দর্শনেই স্বীকৃত হয়েছে। আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে কতকগুলো ব্যবহারিক বিধির নির্দেশ দিয়ে আত্মসাক্ষাৎকারের পথকে সুগম করে দিয়েছেন যোগশাস্ত্রকারেরা।