যোগদর্শনে মনস্তত্ত্ব কী?

অথবা, যোগ মনস্তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, যোগদর্শনে মনস্তত্ত্ব কাকে বলে?
অথবা, যোগদর্শনে মনস্তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, মনস্তত্ব সম্পর্কে যোগ দর্শনে কী বলা হয়েছে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মহর্ষি পতঞ্জলি যোগদর্শনের প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। মহর্ষি পতগুলির নামানুসারে এ দর্শনের নাম পাতঞ্জল দর্শন। পাতঞ্জল দর্শনকে সাংখ্য প্রবচন নামেও অভিহিত করা হয়। তার কারণ, মহর্ষি পতঞ্জলি কপিল মুনি প্রবর্তিত সাংখ্যমত স্বীকার করে সাংখ্য প্রবর্তিত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব; যথা : পুরুষ, প্রকৃতি, মহত্তত্ত্ব, অহংকার, পঞ্চতন্মাত্র, একাদশ ইন্দ্রিয় এবং পঞ্চ মহাভূত স্বীকার করেছেন। পূর্বোক্ত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব ছাড়া আরো একটি তত্ত্ব পাতঞ্জল দর্শনে স্বীকৃত হয়েছে। এ তত্ত্বটি হলো ঈশ্বর তত্ত্ব। এ কারণে পাতঞ্জল দর্শনের অপর নাম ‘সেশ্বর-সাংখ্য।’
যোগদর্শনে মনস্তত্ত্ব (Yoga Psychology) : সাংখ্য ও যোগদর্শন মতে, আত্মা স্বরূপত মুক্ত। জীব হলো স্কুল ও সূক্ষ্ম শরীর বিশিষ্ট আত্মা। সূক্ষ্ম শরীর ইন্দ্রিয়, মন, অহংকার ও বুদ্ধির দ্বারা সৃষ্ট। সাংখ্যের বুদ্ধি, অহংকার ও মন, এ তিন তত্ত্বের সমষ্টিকেই যোগদর্শনে চিত্ত নামে অভিহিত করা হয়। স্থূল বা সূক্ষ্ম শরীর বা চিত্ত কারো সাথে আত্মা স্বরূপত সম্পর্কযুক্ত নয়। তবে অবিদ্যাবশত আত্মা নিজেকে চিত্ত বলে মনে করে। তাই চিত্তের পরিণামকেও নিজের পরিণাম বলে মনে করে। যদিও সে নিজে অপরিণামী। চিত্ত স্বরূপত অচেতন; তবে আত্মার চৈতন্য চিত্তে প্রতিবিম্বিত হয় বলে, তাকে চেতন বলে প্রতীয়মান হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যোগদর্শন মতে, আত্মা, দেহ, মন ও বুদ্ধির অতিরিক্ত এক বিশুদ্ধ চৈতন্যময় আধ্যাত্মিক সত্তা। যোগদর্শন আত্মার মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে খুব সুন্দর এবং প্রাঞ্জল ভাষার আলোকে আলোচনা করেছে। যোগদর্শন সাধারণ মানুষের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করতে পারে। সকল রকম রহস্যময়তা দূর করে দিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সত্যানুসন্ধানের প্রেরণা দেয় এই যোগদর্শন।