সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে লিখ।

অথবা, সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব কী?
অথবা, সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব কাকে বলে?
অথবা, সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্বের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনগুলোর মধ্যে সাংখ্য দর্শনই প্রাচীনতম । শ্রুতি, স্মৃতি, পুরান প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে সাংখ্য দর্শনের উল্লেখ থাকায় এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সাংখ্য দর্শনের আদি গ্রন্থ হলো কপিল প্রণীত ‘তত্ত্ব সমাস’। সাংখ্য দর্শন দ্বৈতবাদী দর্শন। সাংখ্য দর্শনে জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে । নিম্নে সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব (The Sankhya Theory of knowledge) : জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় সাংখ্য দর্শনে তিনটি প্রমাণ স্বীকৃত হয়েছে। যথা : প্রত্যক্ষ (Perception), অনুমান (Inference) ও শব্দ Testimony)। উপমান (Comparison), অর্থাপত্তি (Postulation), অনুপলব্ধি (Non-Cognition) প্রভৃতি অন্যান্য প্রমাণগুলো এ তিনটি প্রমাণের অন্তর্ভুক্ত বলে সাংখ্য দার্শনিকগণ এদের স্বতন্ত্র প্রমাণ বলে স্বীকার করেন নি। বুদ্ধি, মন ও ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় কোন অনধিগত বিষয় সম্পর্কে পুরুষের নির্দিষ্ট ও নিঃসন্দিগ্ধ অবগতিকেই (Cognition) শুদ্ধজ্ঞান বা প্রমা (Valid Knowledge) বলা হয়। এ প্রসঙ্গে Chatterjee & Datta তাঁদের ‘An Introduction to Indian Philosophy’ গ্রন্থে বলেন, “Valid knowledge (pramā) is definite and an
unerring cognition of some object (ärthaparicchitti) thought the modification of buddhi or the intellect which reflects the consciousness of the self in it.” (Page-274) আর যার দ্বারা যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায় তাকে প্রমাণ (Source of knowledge) বলে। সাংখ্য মতে, মন বা বুদ্ধি অচেতন, একমাত্র চৈতন্যস্বরূপ পুরুষেরই জ্ঞান হয়। যেহেতু পুরুষ বা আত্মা সর্বব্যাপী। তাই পুরুষকে জ্ঞান লাভের জন্য বুদ্ধি, মন ও ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিতে হয়। যখন বিষয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের সংযোগ এবং ইন্দ্রিয়ের সাথে মনের সংযোগ হয়, তখন বুদ্ধি বিষয়াকারে পরিণত হয়। বিষয়াকারে পরিণত বুদ্ধিতে যখন পুরুষ বা আত্মার চৈতন্য প্রতিবিম্বিত হয় তখন পুরুষ বা আত্মার বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান জন্মে। যে কোন যথার্থ জ্ঞানের বা প্রসার তিনটি শর্ত আছে। যথা : জ্ঞাতা বা প্রমাতা (Subject), জ্ঞেয় বা প্রমেয় (Object) এবং জ্ঞান লাভের উপায় বা প্রমাণ (Source of Knowledge)। সাংখ্য মতে, পুরুষই জ্ঞাতা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব নিজস্ব অস্তিত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং ভিন্নধর্মী কিছু আলোচনার প্রয়াস পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নৈয়ায়িকদের মতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সাংখ্যা দর্শন এক নিজস্ব গতিময়তার দিকে ধাবমান হয়েছে তার এ গতিময়তা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে তাদের বহুল আলোচিত জ্ঞানতত্ত্ব বিষয়ক মতবাদ। তাইতো ভারতীয় দর্শনে সাংখ্য জ্ঞানতত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।