বৌদ্ধ মহাযান সম্প্রদায় কারা?

অথবা, বৌদ্ধ ধর্ম মহাযান সম্প্রদায় বলতে কী বুঝ?
অথবা, বৌদ্ধ দর্শনের মহাযান সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর বৌদ্ধধর্মের আদর্শ ও রীতিনীতি নিয়ে বুদ্ধদেবের শিষ্যগণের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। প্রাচীনপন্থি বৌদ্ধগণ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালনীয় আচার-ব্যবহারে কঠোরতার পক্ষপাতী। কিন্তু একদল বৌদ্ধ ভিক্ষু এ ধরনের কঠোরতাকে মেনে নেননি। তাই প্রাচীনপন্থীরা তাদেরকে দল থেকে বের করে দেন। এভাবে বৌদ্ধধর্মে হীনযান ও মহাযান নামে দুটি পৃথক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
মহাযান সম্প্রদায় : প্রাচীনপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে একদল বৌদ্ধ ভিক্ষু যারা আচার-আচরণে শিথিলতার পক্ষপাতি তারা নতুন একটি সম্প্রদায় গঠন করেন। বহিষ্কৃত ভিক্ষুগণ সম্মিলিত হয়ে যে সম্প্রদায় গঠন করেন তার নাম ‘মহাসঙ্গিক’ । মহাসঙ্গিক নামে গঠনকৃত এ সম্প্রদায় কালক্রমে ‘মহাযান’ সম্প্রদায় নামে পরিচিতি লাভ করে।
গোঁড়া ও রক্ষণশীল নয় : মহাযান ধর্ম সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয় সম্রাট অশোক এবং কনিষ্কের মধ্যবর্তী সময়ে। কালক্রমে এই সম্প্রদায় খুবই প্রসার লাভ করে। তাদের এই প্রসার লাভের কারণ হলো মহাযানপন্থিদের মানবতাবোধ এবং উদারতাবাদী মনোভাব। হীনযানদের মত মহাযানপন্থিরা এত গোঁড়া ও রক্ষণশীল নয়।
মহাযানী প্রধান বক্তব্য ; বৌদ্ধ ধর্ম তথা দর্শনের প্রধান প্রচেষ্টা ছিল সার্বজনীনভাবে মানুষের মুক্তি অর্জন। গৌতম বুদ্ধ দুঃখ হতে মুক্তির পথ আবিষ্কারের জন্য সাধনা করেছেন। এক্ষেত্রে মহাযানীদের প্রধান বক্তব্য এই যে, সমস্ত মানুষের মুক্তিই যখন লক্ষ্য, তখন সমাজ ত্যাগ করে একান্তে কঠোর কৃচ্ছ্বসাধনের কোন প্রয়োজন নেই। এরূপ চাওয়া সমাজে থেকেই পূর্ণ করা সম্ভব।
সর্বজীবের মুক্তি কামনা : মহাযানপন্থিরা বলেন, কেবল নিজের মুক্তি কারো লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। কারণ নিজের মুক্তির চেষ্টা করা এক রকম স্বার্থপরতা। প্রকৃত বৌদ্ধের কর্তব্য হবে সারা বিশ্বের কল্যাণ সাধন করা।
সর্বজীবে দয়া : বুদ্ধদেব সর্বজীবে দয়া করার উপদেশ দিতেন। বুদ্ধদেবের এই উপদেশকে মহাযানপন্থিরা প্রাধান্য দেন। বিশ্বপ্রেম এবং বিশ্বকল্যাণই মহাযান সম্প্রদায়ের চরল লক্ষ্য। তাদের মুক্তির পথ কেবল একার জন্য নয়। এটা সর্বসাধারণের জন্য এবং সকল জীবের জন্য।
হীনযানদের সমালোচনা : মহাযানীরা হীনযানদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন যে, হীনযানীরা বুদ্ধদেবের উপদেশকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করেছেন। তারা বুদ্ধের উপদেশের তাৎপর্য অনুধাবন করার চেষ্টা করেন নি। সকল মানুষের মুক্তিই যে বুদ্ধদেবের কাম্য ছিল, এর প্রমাণ স্বয়ং বুদ্ধদেবের জীবন হতেই পাওয়া যায়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গতানুগতিক চিন্তাচেতনা থেকে বেরিয়ে এসে গৌতম বুদ্ধের বাণী ও উপদেশের যথার্থ তাৎপর্য অনুসারে জীবন গঠনের কথা বলেছেন মহাযান সম্প্রদায়। গতানুগতিক ধারার বিরোধিতা করে দলত্যাগ করায় অনেকে তাদের সমালোচনা করলেও তাদের মতবাদের নতুনত্ব তাদেরকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।