অথবা, বৌদ্ধ দর্শনে ভবচক্র সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, দ্বাদশ নিদান কী?
অথবা, দ্বাদশ নিদানগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ- খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে ঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও গৌতম বুদ্ধ বাল্যকাল হতেই চিন্তাশীল ও বৈরাগ্যভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি নিজের আত্মশক্তির উপর বিশ্বাস রেখে
বৌদ্ধ গয়ায় বোধিবৃক্ষ তলে বহু বছর কঠোর তপস্যা করে জগতে দুঃখের রহস্য ও স্বরূপ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যুর দুঃখাবহ দৃশ্য দেখে তিনি উপলব্ধি করেন, এ জগৎ দুঃখে পরিপূর্ণ। নিচে প্রশ্নপত্রের আলোকে বৌদ্ধ দর্শনে দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্র ব্যাখ্যা করা হলো :
বৌদ্ধ দর্শনে দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্র : কোন বস্তুই নিজ থেকে উৎপন্ন হয় না-একটি ঘটনা অন্য একটি ঘটনা থেকে উৎপত্তি। সবকিছুর উৎপত্তি হয় ঘটনা থেকে। বৌদ্ধ দর্শনের এ তত্ত্বকে ‘প্রতীত্য-সমুৎপাদ’ বলে। প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি অনুসারে বুদ্ধদেব দুঃখেরও কারণ আছে বলে উল্লেখ করেন। বুদ্ধদেব এ কারণ দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ বৌদ্ধ দর্শনে কার্যকারণ শৃঙ্খলে ১২টি কারণ আছে। তাই একে ‘দ্বাদশ নিদান’ বলা হয়। দ্বাদশ নিদানের আর একটি নাম হলো ‘ভবচক্র’। ‘ভবচক্র’ বলার কারণ হলো, এরাই মানুষকে জন্ম, দুঃখভোগ ও পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে বারংবার সংসারে চাকার মতো ঘুরাচ্ছে। কারণ হতে কার্যের দিকে অগ্রসর হলে দ্বাদশ নিদানের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ–
২. জরামরণের কারণ জাতি বা জন্ম;
১. দুঃখের কারণ জরামরণ;
৩. জাতি বা জন্মের কারণ ভব;
৪. ভব-এর কারণ উপাদান;
৫. উপাদানের কারণ তৃষ্
৮. স্পর্শের কারণ ষড়ায়তন
৯. ষড়ায়তনের কারণ নামরূপ;
১০. নামরূপের কারণ বিজ্ঞান;
১১. বিজ্ঞানের কারণ সংস্কার এবং
১২. সংস্কারের কারণ অবিদ্যা।
এ অবিদ্যা হলো চারটি আর্যসত্য সম্পর্কে অজ্ঞতা-জগত ও জীবন সম্পর্কে অজ্ঞতা। সুতরাং অজ্ঞতা বা অবিদ্যাকে দুঃখের মূল কারণ বলা যেতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় বৌদ্ধ দর্শনে দ্বিতীয় আর্যসত্যের ব্যাখ্যায় যে দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্রের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা ভারতীয় দর্শনের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।