অথবা, ত্রিপিটক বলতে কী বুঝ?
অথবা, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গৌতমবুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদকেই বৌদ্ধ দর্শন বা বৌদ্ধ ধর্ম বলে। জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যুর দুঃখাবহ দৃশ্য দেখে বুদ্ধদেব উপলব্ধি করেন এ জগৎ দুঃখে পরিপূর্ণ। এ দুঃখের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী জীবন গ্রহণ করেন এবং বোধি বা সত্যের জ্ঞানলাভ করেন। গৌতম বুদ্ধ বিভিন্ন স্থানে তাঁর বাণী এবং মানবতার সেবা করেন। গৌতম বুদ্ধ নিজে মুখে মুখেই তাঁর বাণী ও উপদেশ প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সেসব মূল্যবান বাণী ও উপদেশগুলোর অভিন্নতা ও মৌলিকতা রক্ষার জন্য তাঁর শিষ্যরা সেগুলোকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন। এগুলো পালি ভাষায় লেখা। এগুলোকে ‘পিটক’ বলা হয়।
ত্রিপিটক : পিটক কথাটির অর্থ পেটি বা ঝাঁপি। বৌদ্ধধর্ম ও সংঘের সমস্ত নিয়মকানুন, শৃঙ্খলা, তত্ত্ব, আদর্শের ব্যাখ্যা পিটকের তিনটি প্রধান খণ্ডে সংকলিত হয়। এ তিনটি খণ্ডকে একত্রে ত্রিপিটক বলা হয়। বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের মূলগ্রন্থ ‘ত্রিপিটক’।
ত্রিপিটকের তিনটি অংশ, যথা : বিনয় পিটক, সুত্ত পিটক এবং অভিধম্ম পিটক। নিম্নে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো :
১.বিনয় পিটক : বিনয় পিটকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা ভিক্ষুদের আচরণবিধির উল্লেখ করা হয়েছে। সংযত আচরণ, নিয়মনিষ্ঠা, নৈতিক শূচিতা, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী জীবনের মূলমন্ত্র- এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ।
২. সুভ পিটক : বুদ্ধদেব তাঁর ধর্মের উদ্দেশ্য, সাধনা ও ফল সম্বন্ধে যা বলেছেন সুত্ত পিটকে তারই আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। সুত্ত কথাটির অর্থ সংক্ষিপ্ত বচন।
৩. অভিধম্ম পিটক : এ গ্রন্থে বৌদ্ধ দার্শনিক আলোচনা সন্নিবিষ্ট হয়েছে। সুত্ত পিটকে যা যা বলা হয়েছে তারই দীর্ঘ ও বিস্তৃত আলোচনা অভিধম্ম পিটকে করা হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিনয় পিটক, সুত্ত পিটক এবং অভিধম্ম পিটক—এ তিনটি অংশের আলোচনার সমন্বয়ে ত্রিপিটক গঠিত। বুদ্ধদেবের উপদেশ এবং বৌদ্ধ দর্শন সম্পর্কে যে কোন জ্ঞাতব্য বিষয় ত্রিপিটকে পাওয়া যায়