বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণ লাভের উপায় কী?

অথবা, নির্বাণ লাভের উপায় সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণ লাভের উপায় সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
অথবা, নির্বাণ লাভের কোন মাৰ্গ আছে কি?
উত্তর৷ ভূমিকা :
নির্বাণ বৌদ্ধ দর্শনের প্রাণ স্বরূপ। বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি বা দুঃখ থেকে চির মুক্তি লাভকেই নির্বাণ বলা হয়েছে। নিম্নে প্রশ্নপত্রের আলোকে আলোচনা করা হলো :
নির্বাণ লাভের উপায়সমূহ : গৌতম বুদ্ধের চতুর্থ আর্যসত্য হচ্ছে দুঃখ নিরোধ মার্গ। বুদ্ধদেবের মতে, দুঃখ নিরোধের মার্গ বা পথ আছে। যে পথ অনুসরণ করে দুঃখ থেকে চিরমুক্তি লাভ করা যেতে পারে, সে পথকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলে অভিহিত করা হয়েছে। নির্বাণ লাভের উপায়সমূহ হলো :
১. সম্যক দৃষ্টি : চারটি আর্য সত্যের যথার্থ জ্ঞানই হলো সম্যক দৃষ্টি। অবিদ্যা থেকেই জগৎ ও জীবন সম্পর্কে মিথ্যা জ্ঞানের উদ্ভব।
২. সম্যক সংকল্প : পার্থিব বিষয়বস্তুর প্রতি অনাসক্তি, ভোগ বাসনা জয় করার ইচ্ছা এবং দ্বেষ ও রাগ বিসর্জন দেয়াই সম্যক সংকল্প।
৩. সম্যক ব্যায়াম : সম্যক ব্যায়াম বলতে বুঝায় কুচিন্তার বিনাশ সাধন করা, কুচিন্তার উৎপত্তি নিবারণ করা, সৎচিন্তার সংরক্ষণ ও সংবর্ধন করা এবং সৎচিন্তা উৎপাদনের জন্য সচেষ্ট হওয়া।
৪. সম্যক কর্মান্ত : সম্যক কর্মান্ত বলতে বুঝায় প্রাণ হত্যা, চৌর্য ও ইন্দ্রিয় সেবা থেকে বিরত হওয়া।
৫. সম্যক আজীব : সদুপায়ে জীবনযাত্রা নির্বাহ করাই হলো সম্যক আজীব। বুদ্ধদেব বলেছেন, মুক্তিকামীকে জীবিকা অর্জনের জন্য অসৎ উপায় বর্জন করতে হবে। মিথ্যা ভাষণ ও অন্যায় আচরণ বর্জন করে সদুপায়ে জীবিকা নির্বাহ করাই হলো মুক্তিকামীর কর্তব্য।
৬. সম্যক ব্যায়াম : মনে দৃঢ়মূল কুচিন্তার বিনাশ সাধন, নতুনভাবে মনে কুচিন্তার উৎপত্তি নিবারণ, মনে সৎ চিন্তা আনয়ন এবং সৎ চিন্তাকে মনে সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টাকে সম্যক ব্যায়াম বলা হয়।
৭. সম্যক স্মৃতি : জগৎ, শরীর, মন ও ইন্দ্রিয়াদি সবই অনিত্য, জীবন ক্ষণস্থায়ী প্রভৃতি তত্ত্বকথা সবসময় স্মরণে রাখাই ‘সম্যক স্মৃতি’।
৮. সম্যক সমাধি : মনঃসংযোগের নামই সম্যক সমাধি। যে ব্যক্তি উল্লেখিত সাতটি নীতির অধিকারী হয়েছেন তিনিই সম্যক সমাধির মাধ্যমে নির্বাণ লাভ করতে পারেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নির্বাণ হলো কামনা-বাসনা, দ্বেষ-মোহ প্রসূত দুঃখের আন্তত্যিক নিবৃত্তি যা সমাধির মাধ্যমে লাভ করা যায়।