অথবা, নির্বাণ ও মহা পরিনির্বাণের মধ্যে পার্থক্য কী?
অথবা, নির্বাণ ও মহা পরিনির্বাণের মধ্যে বৈসাদৃশ্য কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি বা দুঃখ থেকে চির মুক্তি লাভকেই নির্বাণ বলা হয়েছে। বৌদ্ধ দর্শনে মোক্ষকেই নির্বাণ নামে অভিহিত করা হয়েছে। বৌদ্ধ মতে, অষ্টাঙ্গিক মার্গ যেমন- সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্ বা বাক্ সংযম, সম্যক কর্মান্ত বা সংযত আচরণ, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক
সমাধি অনুসরণ করে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব।
নির্বাণ ও মহা নির্বাণের পার্থক্য : কেউ কেউ নির্বাণ এবং মহানির্বাণ বা মহাপরিনির্বাণের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। নির্বাণ হলো দুঃখকে জয় করা এবং মহানির্বাণ বা মহাপরিনির্বাণ হলো নির্বাণ লাভের পর দেহ অবসান হওয়া।
নির্বাণ সাধারণত দু’প্রকার; যথা :
ক. উপাধি বিশেষ- এ অবস্থায় মানুষের কামনা বিনাশপ্রাপ্ত হয় এবং
খ. অনুপাধি বিশেষ-“যখন সমস্ত সত্তারই বিনাশ সাধন হয়ে থাকে। কোন লোক নির্বাণ লাভ করেছে বলা হলে উপাধি বিশেষ নির্বাণের কথাই বলা হয়ে থাকে। এভাবে প্রকৃত দুঃখকে জয় করে যখন সত্যকে লাভ করা যায় তখনই নির্বাণ লাভ সম্ভব হয়। আবার যখন দেহাবসান হয় তখনই মহানির্বাণ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ হয়। বুদ্ধদেব দু’প্রকার কর্মের কথা বলেছেন। যথা- সকাম কর্ম এবং নিষ্কাম কর্ম। রাগ, দ্বেষ, মোহজাত কর্মই হলো সকাম কর্ম। মানুষের সকাম কর্মই তার মধ্যে বন্ধনের সৃষ্টি করে তার পুনর্জন্ম ঘটায়। কিন্তু নিষ্কাম কর্ম বিষয়ানুগ সৃষ্টি করে না। নিষ্কাম কর্মের ফলে পুনর্জন্মের কোন সম্ভাবনা থাকে না। সুতরাং এ নিষ্কাম কর্মেই মহানির্বাণ লাভ করা যায়। মহানির্বাণ লাভের পর জীবের পুনর্জন্ম হয় না, জীব তখন চিরমুক্তি লাভ করে। অন্যদিকে নির্বাণ লাভের পর যখন দেহের অবসান হয় তখন জীব মহাপরিনিধান লাভ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নির্বাণ সম্পর্কে বৌদ্ধ দর্শনে যে ধারণা দেয়া হয়েছে তা অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। এছাড়া বৌদ্ধ দর্শনে নির্বাণ লাভই ছিল চরম উদ্দেশ্য।