অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রকৃতি তুলে ধর
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ৮টি বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো অনুসন্ধানের সেই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও কৌশল, যার দ্বারা ধারাবাহিক, বস্তুনিষ্ঠ ও সুশৃঙ্খল জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব হয়।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নোক্ত কতকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় :
১. এটি বস্তুনিষ্ঠ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বস্তুনিষ্ঠতা। এটি সত্যের অনুসন্ধান করে এবং বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন প্রপঞ্চকে মূল্যায়ন করে। যে বাস্তব জগতে আমরা বাস করি সে জগতের বাস্তব অবস্থা যেমন আছে তাকে ঠিক তেমনিভাবে অনুসন্ধান করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করাই এ পদ্ধতির মুখ্য উদ্দেশ্য ।
২. এটি নিয়মতান্ত্রিক : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো নিয়মতান্ত্রিকতা । এ পদ্ধতির ধারণা অনুযায়ী মনে করা হয় যে, বিশ্বের সবকিছুই নিয়মনীতি মেনে চলে এবং ঘটনা প্রবাহও একটি সুনির্দিষ্ট ছাঁচ বা নিয়ম মেনে চলে।মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যপ্রণালিও একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মবিধি মেনে চলে এবং এ কার্যপ্রণালির মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।
৩. এটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অভিজ্ঞতাভিত্তিক । জ্ঞানের সঠিক উৎস হচ্ছে অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কোন বিষয়ের সত্যতা প্রমাণিত না হলে তা বর্জিত হবে। কেননা এটা প্রচলিত সত্যকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে ।
৪. এটি নিরপেক্ষ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি নিরপেক্ষ তথা মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে। এ পদ্ধতি কোনো বিষয় বা ঘটনাকে ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, সত্য-মিথ্যা, গ্রহণীয়-অগ্রহণীয় ইত্যাদি বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান করে না । যেহেতু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো সুসংবদ্ধ জ্ঞান আহরণ, সেহেতু এরূপ অনুসন্ধানকে সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন হতে হয়।
৫. এটি যাচাইযোগ্য : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো একে যাচাইযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ একই পদ্ধতি বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা একই ধরনের গবেষণায় পুনঃপুন ব্যবহৃত হয়ে যদি একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়, তবে সে পদ্ধতি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মর্যাদা পাবে ।
৬. এটি তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত : এ পদ্ধতির অপর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো একে তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে । গবেষণা নতুন তত্ত্বের আবিষ্কার করে, নতুন তত্ত্বের পূর্বানুমান গঠন করে এবং তত্ত্বের পুনর্গঠন করে । তত্ত্ব ও গবেষণা একে অন্যের পরিপূরক এবং পরস্পর নির্ভরশীল বিধায় গবেষণার সাহায্য ছাড়া তত্ত্ব টিকে থাকতে পারে না । তাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত হতে হয় ।
৭. সাধারণীকরণ : সাধারণীকরণ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রধান নির্ধারক। কোনো একটি বিষয়কে বিজ্ঞান পদবাচ্য হতে হলে বিষয়টির সাধারণীকরণ থাকা অপরিহার্য । কেননা কোনো একটি তত্ত্ব সম্পর্কে যে সাধারণীকরণ দাঁড় করানো হয়, সেটি ভবিষ্যতে অনুসন্ধানের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে ।
৮. ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানে সক্ষম : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানে সক্ষম হতে হয়। কেননা ভবিষ্যদ্বাণী বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোনো বিষয়, ঘটনা ও তার কার্যকারণ সম্পর্কিত বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানের আলোকে এর মাধ্যমে সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কি ঘটতে পারে তা এ পদ্ধতি নির্ভুলভাবে ব্যাখ
্যা প্রদান করে থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তথ্যরাজির ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও শ্রেণিকরণ । উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলির প্রেক্ষিতে যে কোনো অনুসন্ধান পদ্ধতিকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে ৷