সত্য ও অস্তেয় বলতে কী বুঝ?

অথবা, সত্য ও অস্তেয় কাকে বলে?
অথবা, সত্য ও অস্তেয় কী?
অথবা, সত্য ও অস্তেয় সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জৈন দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জীবের বন্ধন এবং সে বন্ধন হতে তার মুক্তি। এটি আত্মার বন্ধন হতে মুক্তির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতি পালন ও বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম একটি হলো পঞ্চ মহাব্রত পালন। পঞ্চ মহাব্রত পালনে আত্মার মুক্তি লাভ হয়। অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ হলো পঞ্চ
মহাব্রত । প্রশ্নানুসারে সত্য ও অস্তেয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
সত্য : সাধারণ অর্থে সত্য বলতে আমরা বুঝি যাকে দেখা বা জানা হয়েছে তাকে সেভাবে প্রকাশ করা। সত্য মিথ্যার বিরোধী দিক। কিন্তু জৈন মতে সত্য কেবল মিথ্যার বিরোধী দিক নয়, সত্য হলো যা মিথ্যা নয় এবং হিতকর ও মনোহর তা বলা। তারা আরো বলেন, যে সত্য কথার দ্বারা অপরের অনিষ্ট হয়, সে সত্য কখনো সমর্থনযোগ্য নহে। জৈনদের সত্যাচার- অহিংসার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জৈনমতে সত্যব্রত উদযাপন করতে হলে ক্রোধ, লোভ ও ভয়কে জয় করা প্রয়োজন।
অস্তেয় : অস্তেয় অর্থ, অপরের জিনিস চুরি না করা, এমনকি চুরি করার ইচ্ছা পোষণও না করা। জিনগণ অপরের সম্পত্তিকে অপরের জীবনের মতো মূল্য দিয়ে থাকেন। মানুষের সম্পত্তি হলো তার বহির্জীবন। সুতরাং কারো সম্পত্তি হরণ করা তার জীবন হরণেরই সমান। জৈন মতে, চৌর্যবৃত্তি হিংসাবৃত্তির সাথে জড়িত। কারণ চুরি করার ফলে অপহৃত শক্তি
জীবনধারণের উপায় হতে বঞ্চিত হয়। তাই বলা যায়, অহিংসাব্রত এবং অস্তেয়ব্রত একে অন্যের সাথে জড়িত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সত্য হলো যা মিথ্যা নয় এবং যা হিতকর ও মনোহর। আর অস্তেয় হলো অপরের জিনিস চুরি না করা, এমনকি চুরি করার ইচ্ছাও পোষণ না করা। সুতরাং জৈন দর্শনে সত্য ও অস্তেয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।