অথবা, জৈন নিরীশ্বরবাদ কী?
অথবা, জৈন নিরীশ্বরবাদ সম্পর্কে ধারণা দাও।
অথবা, জৈনগণ কী কী যুক্তির মাধ্যমে নিরীশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : আস্তিক দর্শনের পাশাপাশি ভারতীয় দর্শনে কিছু নাস্তিক দর্শনও লক্ষ্য করা যায় এবং তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো জৈন দর্শন। জৈনধর্ম নিরীশ্বরবাদী তারা দর্শনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মতো ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। তারা বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
জৈন নিরীশ্বরবাদ : জৈন ধর্ম নিরীশ্বরবাদী। বৌদ্ধধর্মের মতো জৈন ধর্মও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। জৈন মতে ঈশ্বরের সত্তা প্রত্যক্ষ অনুমান প্রভৃতির দ্বারা প্রমাণ করা যায় না। জগৎকে ব্যাখ্যা করার জন্যও ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা কোন প্রয়োজন নেই। জীবের কর্ম হতে যে অন্ধ অদৃষ্ট শক্তির সৃষ্টি হয় সে শক্তিই পুদগলের সাহায্যে জগৎ সৃষ্টি করেছে। জিন
মতে জগৎ সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ হলো অদৃষ্ট শক্তি এবং উপাদান কারণ হলো পুদগল। জৈনগণ কতিপয় যুক্তির সাহায্যে তাদের নিরীশ্বরবাদী মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন যা নিম্নরূপ।
১. নৈয়ায়িকগণের যুক্তি হলো প্রত্যেক সাবয়ব বস্তুর সৃষ্টির জন্য নিমিত্ত কারণ বা কর্তাব প্রয়োজন আছে। জগৎ সাবয়বীতাই এটি ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট। জৈনগণ বলেন নৈয়ায়িকদের এ অনুমান যুক্তিসিদ্ধ নয়। কারণ জগৎ সাবয়বী কি না এটা প্রমাণ সাপেক্ষ। আবার সাবয়ীর হলেই যে জগৎ সৃষ্টি হবে তাও প্রমাণ সাপেক্ষ।
২. জৈনগণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ বিষয়ক কার্যকারণ যুক্তিকে অস্বীকার করে বলেন যে প্রত্যেক কার্য কোন একটা কারণেই সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টির পূর্বে এর কোন অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু জগৎ কোন নির্দিষ্ট কালে সৃষ্টি হয় না। এটি অনাদি কাল হতে চলে আসছে। সুতরাং জগতের কারণরূপী ঈশ্বরের ধারণা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৩. জৈনগণের মতে, ঈশ্বরের উপর বিভিন্ন গুণ যেমন— ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, নিত্যমুক্ত ও নিত্যপূর্ণ ইত্যাদি গুণ আরোপ করা হয়। সেগুলো প্রমাণ করা যায় না। যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হতেন তবে সব বস্তুই তিনি সৃষ্টি করতে পারতেন যা বাস্তবে দেখা যায় না। আবার নিত্যমুক্তি ও নিত্যপূর্ণ শব্দগুলো অর্থহীন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জৈনগণ বিভিন্ন যুক্তির সাহায্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব খণ্ডন করে তাদের নিরীশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু জগৎ স্রষ্টা ঈশ্বরের সত্তা অস্বীকার করলেও মুক্ত সিদ্ধ পুরুষের ধ্যান ও পূজার
প্রয়োজনীয়তা জৈনগণ স্বীকার করেছেন। জিনদের মতে, মুক্তি কেউ কাউকে এনে দিতে পারে না। প্রত্যেক জীবকে তার নিজের চেষ্টায় মুক্তি লাভ করতে হয়।