অথবা, জীব বা আত্মার বন্ধন বলতে কী বুঝ?
অথবা, জীব বা আত্মার বন্ধন থেকে কীভাবে মুক্ত হওয়া যায়?
অথবা, জৈন দর্শনের নীতিবিদ্যা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : জৈন দর্শনের অন্যতম প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো নীতিশাস্ত্র । জৈনদের নীতিতত্ত্ব জীবের বন্ধন এবং সে বন্ধন হতে কিভাবে মুক্তি লাভ করা যায় তার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। জৈন মতে, বন্ধন, মুক্তি এবং পূর্ণতা লাভই মানুষের জীবনের পরম পুরুষার্থ।
জৈন নীতিবিদ্যা : নিম্নে জৈন নীতিবিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
জীব বা আত্মার বন্ধন : জৈন মতে, চেতনাসম্পন্ন দ্রব্যই জীব। এ জীব বা আত্মা পূর্ণ এবং অনন্ত জ্ঞান অসীম শক্তি ও অফুরান্ত আনন্দের অধিকারী। কিন্তু জীবের এসব ঐশ্বর্য বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। আর জীবের পূর্ণতা লাভের প্রধান বাধা হলো সুদগল পুষ্ট দেহ । জীব বা আত্মা জীবদেহে পরিব্যাপ্ত থাকে বলে দেহ গঠনকারী পুদগল পরমাণুর প্রলেপ তার উপর পড়ে। ফলে আত্মার অন্তর্নিহিত পূর্ণতা ঢাকা পড়ে থাকে।
জৈনগণ চারটি ভাবের উল্লেখ করেছেন। যথা : ক্রোধ, মান, মায়া এবং লোভ। এ ভাবগুলোকে ‘কষায়’ বলা হয়। তাদের মতে এ ভাবগুলো আত্মার বন্ধনের প্রাথমিক কারণ।
জীব বা আত্মার মুক্তি : এখন প্রশ্ন হলো আত্মার মুক্তি কি করে সম্ভব? জৈন মতে, আত্মার মুক্তির জন্য প্রথম কাজ হলো আত্মায় পুদগলের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং দ্বিতীয় কাজ হলো আত্মায় পূর্ব সঞ্চিত পুদগলের অপসারণ করা। প্রথম ক্রিয়ার নাম হলো সংবর এবং দ্বিতীয় ক্রিয়ার নাম হলো আত্মার কর্মনাশ। এখন প্রশ্ন, আত্মার নব পুদগলের অনুপ্রবেশ বন্ধ ও পূর্বসঞ্চিত পুদগলের অপসারণ কি করে সম্ভব? জৈন মতে, কামনা বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্যই আত্মার সাথে পুদগলের সংযুক্তি ঘটে এবং এ কামনা বাসনার উৎপত্তি হয় অজ্ঞান হতে। সত্য বা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞানতা বা মিথ্যা জ্ঞানের নিবৃত্তি ঘটে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে কেবল সত্য বা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা আত্মায় নব পুদগলের অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং পূর্বে সঞ্চিত পুদগলের অপসারণ সম্ভব। তাই জৈনগত মুক্তি লাভের জন্য সম্যক জ্ঞান এবং এ সম্যক জ্ঞানের জন্য প্রয়োজন সম্যক দর্শন। আবার সম্যক জ্ঞান ও সম্যক দর্শনের জন্য তেমন প্রয়োজন সম্যক চরিত্রের।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্যক জ্ঞান সম্যক দর্শন এবং সম্যক চরিত্র এ ত্রিরত্নের অনুশীলনের ফলে জীব অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত দর্শন, অনন্ত শক্তি ও অনন্ত সুখের অধিকারী হওয়া যায়।