ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ বলতে কী বুঝ?

অথবা, ব্রহ্মচার্য ও অপরিগ্রহ কী?
অথবা, ব্রহ্মচার্য ও অপরিগ্রহ সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জৈন দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জীবের বন্ধন এবং সে বন্ধন হতে তার মুক্তি। এ আত্মার বন্ধন হতে মুক্তির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতি পালন। এ বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম একটি হলো পঞ্চ মহাব্রত পালন । অস্তেয়, অহিংসা, সত্য, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ হলো পঞ্চ মহাব্রত।
প্রশ্নানুসারে ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ নিয়ে নিয়ে আলোচনা করা হলো :
ব্রহ্মচর্য : সাধারণত জননেন্দ্রিয়ের নিবৃত্তিকেই ব্রহ্মচর্য বলা হয়। কিন্তু জৈনগণ ব্রহ্মচর্য কথাটিকে আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। তাঁদের মতে, সমস্ত কামবৃত্তির নিরোধই ব্রহ্মচর্য। তারা বলেন, বাহ্য আচরণে সংযম প্রচার করে চিন্তায় বাক্যে স্বৰ্গভোগ কামনায় এমনকি অন্যের অসংযম প্রচারে প্রশ্রয় দানেও মানুষ অসংযমী হতে পারে। সুতরাং পরিপূর্ণভাবে ব্রহ্মচর্য পালনের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, অন্তর বা বাহ্য সূক্ষ্ম বা স্থূল, ঐহিক বা পারলৌকিক সব রকম অসংযম বর্জন করতে হবে।
অপরিগ্রহ : চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এ পঞ্চইন্দ্রিয়ের গ্রহণীয় বিষয় হলো যথাক্রমে রূপ, শব্দ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ। এসব বিষয়ের আকর্ষণ হতে নিজেকে মুক্ত রাখাই অপরিগ্রহ। বিষয় বাসনাই জীবের জন্মের কারণ এবং এ জন্মই জীবের বন্ধনের কারণ । সুতরাং বিষয় বাসনা হতে মুক্ত হতে না পারলে বন্ধন মুক্তি সম্ভব নয়। জৈন মতে, অপরিগ্রহ ব্রতের সাহায্যে জীব বিষয় বাসনা হতে মুক্ত হয়। গৃহী এবং সন্ন্যাসী উভয়ের জন্য অপরিগ্রহ ব্রতের ব্যবস্থা আছে। তবে গৃহীদের অপরিগ্রহ ব্রত তুলনামূলক সহজসাধ্য, তাই এর নাম অনুব্রত। কিন্তু সন্ন্যাসীদের যে অপরিগ্রহ ব্রত বিধান আছে তা কঠিন তাই এর নাম মহাব্রত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, জীবাত্মা আত্মার মুক্তির জন্য যে বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতি পালনের কথা বলেছেন তার মধ্যেই অন্যতম দুটি কর্ম পদ্ধতি হলো ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ।