অথবা, পঞ্চ মহাব্রত বলতে কী বুঝ?
অথবা, পঞ্চ মহাব্রতগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : জৈন দর্শনের অন্যতম প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো নীতিশাস্ত্র। আর নীতিশাস্ত্র আলোচনা করতে গিয়ে জৈন দার্শনিকরা জীবের বন্ধন এবং সে বন্ধন হতে কিভাবে মুক্তি লাভ করা যায় তা আলোচনা করেছে। এ মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজন সম্যক চরিত্র গঠনের। আর এ সম্যক চরিত্র গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো পঞ্চ মহাব্রত পালন করা।
পঞ্চ মহাব্রত : জৈনরা অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিহার্যকে পঞ্চ মহাব্রত বলেছেন। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো :
অহিংসা : চিন্তা, বাক্য ও কার্য সকল প্রকার অহিংসা থেকে বিরত হওয়াই জৈনদের লক্ষ্য। মানুষ যে কেবল জীব হত্যা করবে না তা নয়, বরং জীব হত্যার কথা প্রকাশ্যে বলবে না বা চিন্তাও করবে না। সকলের প্রতি প্রেম ও দয়ার উপরই অহিংসা ধর্ম প্রতিষ্ঠিত।
সত্য : জৈনরা সত্য বলতে শুধুমাত্র সত্য কথন বুঝেন না, যা সত্য এবং হিতকর এরূপ কথা বলাকেই বুঝে থাকেন। সত্য অহিংসা নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
অস্তেয় : অপরের জিনিস চুরি না করা, এমনকি চুরি করার ইচ্ছাপোষণও না করাই অস্তেয়। জৈনগণ অপরের সম্পত্তিকে অপরের জীবনের মতো মূল্য দিয়ে থাকেন। সুতরাং কারো সম্পত্তি হরণ করা তার জীবন হরণ করার সমান।
ব্রহ্মচর্য : ব্রহ্মচর্য বলতে সাধারণত যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত হওয়াকে বুঝায়। কিন্তু জৈনরা ব্রহ্মচর্য বলতে সকল প্রকার ইন্দ্রিয় সম্ভোগ থেকে বিরত হওয়াকে বুঝায়। সব রকম কামের নিরোধই ব্রহ্মচর্য। শুধু বাহ্য সংযম করলেই চলবেনা। অন্তরে, বাইরে, প্রত্যক্ষভাবে, চিন্তায় বাক্যে ও মন সর্বপ্রকার সংযম অবস্থান করতে হবে।
অপরিগ্রহ : চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এ পঞ্চইন্দ্রিয়ের গ্রহণীয় বিষয় হলো যথাক্রমে রূপ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ। এসব বিষয়ের আকর্ষণ হতে নিজেকে মুক্ত রাখাই অপরিগ্রহ। বিষয় বাসনাই জীবের জন্মের কারণ এবং এ জন্মই জীবের বন্ধনের কারণ । সুতরাং বিষয় বাসনা হতে মুক্ত হতে না পারলে বন্ধন মুক্তি সম্ভব নয়। তাই অপরিগ্রহ ব্রতের সাহায্যে জীব
বিষয় বাসনা হতে মুক্ত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জৈন মতে জীব বা আত্মার যেমন বন্ধন আছে, আবার বন্ধন হতে মুক্তিও আছে। আর এ বন্ধন হতে মুক্ত হওয়ার জন্য যে বিভিন্ন পথ বা কর্ম রয়েছে তার মধ্যে সম্যক চরিত্র অন্যতম। এ সম্যক চরিত্রের একটি অঙ্গ হলো পঞ্চ মহাব্রত।