অথবা, জৈনরা কীভাবে জীব ও অজীবের পার্থক্য করেন?
অথবা, জীব থেকে অজীবের ভিন্নতা জৈন দর্শনের অনুসরণে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনে নাস্তিক সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে জৈন দর্শন অন্যতম। জৈন মতে, যথাযথ ধারণাই জ্ঞান। কোন বস্তু বাস্তবে যেরকম তাকে সেভাবে জানাকেই জ্ঞান বলা হয়। যে ধারণায় কোন রকমের সন্দেহ থাকে সে ধারণাকে যথার্থ জ্ঞান বলা যায় না। যথার্থ জ্ঞান মানুষের উদ্দেশ্যসাধনে সহায়তা করে থাকে। যথার্থ জ্ঞানের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জৈনরা জাগতিক দ্রব্যসমূহকে জীব ও অজীব এ দুই ভাগে ভাগ করেছেন।
জীব ও অজীবের পার্থক্য : জৈনরা জীব ও অজীবের স্বরূপগত দিকের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে এদের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য চোখে পড়ে :
১. চেতনগুণ : জৈনদের মতে, জগতে নানা ধরনের দ্রব্য রয়েছে। এসব দ্রব্য যেসব পরমাণুর সমবায়ে গঠিত .সগুলো নানাবিধ গুণসম্পন্ন। এসব গুণের মধ্যে অন্যতম একটি গুণ হলো চেতনা। জৈন মতে, সব দ্রব্য চেতনা গুণসম্পন্ন নয় । জীব ও অজীবের প্রধান পার্থক্য হলো জীব চেতন গুণসম্পন্ন কিন্তু অজীব অচেতন।
২. পরিপূর্ণতা : জীব হচ্ছে স্বভাবগত দিক থেকে পরিপূর্ণ ধরনের। এর মধ্যে কোন চাহিদা থাকে না। অন্যদিকে, অজীব পরিপূর্ণ নয়। তাই অজীর সবসময় নিজস্ব চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকে।
৩. কামনা-বাসনা : পরিপূর্ণ স্বভাবের কারণে জীব সর্বপ্রকার কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। কিন্তু অজীব কামনা- বাসনার ঊর্ধ্বে নয়।
৪. গঠনগত দিক : জৈন মতে, পূর্বজন্মের কর্মফল ভোগ করার জন্য জীব পুনরায় জগতে জন্মগ্রহণ করে। আর তাদের দেহ গঠিত হয় কর্মপোযোগী পুদগল পরমাণুর দ্বারা। কিন্তু অজীব গঠিত হয় জড় পদার্থ দ্বারা, যা নিষ্ক্রিয় স্বভাবের।
৫. অবস্থানগত দিক : জৈন দার্শনিকরা মনে করেন, জীব পরিব্যাপ্ত থাকে জীবদেহের অভ্যন্তরে। পুদগল পরমাণুর প্রলেপ দ্বারা এগুলো ঢাকা থাকে। তাই এগুলো বাহ্যত দৃশ্যমান নয়। কিন্তু অজীব জড় প্রকৃতির মধ্যে পরিব্যাপ্ত বলে এগুলো বাহ্যত দৃশ্যমান।
৬. বন্ধন : জীবের মধ্যে নানা ভাবের সমন্বয় রয়েছে বলে তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু অজীব সব ধরনের বন্ধনের ঊর্ধ্বে
৭. ভাবনা : জীব সক্রিয় প্রকৃতির। তাই বিভিন্ন সময়ে এগুলোতে বিভিন্ন ভাবনার সমাবেশয়। এ ভাবনাগুলো আত্মাস্থিত হতে পারে আবার জাগতিক বিষয়াবলির কু-ভাবনাও হতে পারে। কিন্তু অজীব সমস্ত ভাবনার ঊর্ধ্বে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, জীব ও অজীবের পার্থক্য করে জৈন দার্শনিকগণ যে মত প্রকাশ করেছেন তার বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে নানা আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এসব আপত্তি সত্ত্বেও আমরা বলতে পারি যে, তাদের চিন্তাধারার দার্শনিক গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।