অথবা, চার্বাকদের দেহাত্মবাদ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, চার্বাকরা আত্মা বলতে কী বুঝেন?
অথবা, চার্বাকদের মতে আত্মা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : চার্বাকদের মতে, প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে আমরা সবকিছু জানতে পারি। প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে আমরা চৈতন্যকে জানতে পারি। তাই চৈতন্যের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে চৈতন্যের আধার হিসেবে চার্বাকরা দেহাতিরিক্ত আত্মাকে স্বীকার করে না।
আত্মা সম্পর্কে চার্বাকদের মত : অন্যান্য ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়গণ মনে করেন প্রাণীর ধর্ম চৈতন্য। জড়ের মধ্যে চৈতন্য গুণ নেই। তাই চৈতন্য গুণ বহনকারী আত্মার অস্তিত্ব রয়েছে এবং জীবের মৃত্যুর পরও তা অস্তিত্বশীল থাকে। কিন্তু চার্বাকদের মতে চেতনা দেহরই একটা বিশেষ গুণ। দেহের বিনাশের সাথে সাথে চেতনারও বিনাশ ঘটে।।কাজেই চৈতন্য কোন অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক সত্তার গুণ নয়। চৈতন্যবিশিষ্ট দেহই আত্মা। আত্মা বলতে স্বতন্ত্র কিছু নেই। চৈতন্য দেহরই এক নতুন গুণ। ক্ষিতি, অপ, অগ্নি ও বায়ুর সমন্বয়ে দেহ গঠিত। এ উপাদানগুলোর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশ্রিত হলে যে দেহ উৎপন্ন হয়, সেই দেহের নতুন গুণ হলো চেতনা। চার্বাকদের মতে, বিচ্ছিন্ন উপাদানের মধ্যে কোন গুণ পরিলক্ষিত না হলেও সেই উপাদানগুলোর নির্দিষ্ট অনুপাতে সংমিশ্রণের ফলে নতুন গুণের আবির্ভাব ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, পান, চুন, খয়ের, সুপারি এর কোনটির মধ্যেই লাল রঙ দেখা যায়। না, কিন্তু পান, চুন, খয়ের, সুপারি একসাথে চর্বিত হলে লাল রঙের আবির্ভাব ঘটে। চৈতন্য সেরূপ ক্ষিতি, অপ, অগ্নি, বায়ুর সংমিশ্রণের ফলে উৎপন্ন হয়, কাজেই চৈতন্য মানবদেহের গুণবিশেষ। চার্বাকদের মতে, আত্মা দেহ থেকে অভিন্ন নয় বলেই ‘আমি স্থূল’, ‘আমি কৃশকায়’, ‘আমি কৃষ্ণবর্ণ’ ইত্যাদি উক্তি করে থাকি, আত্মা যদি এক ও অভিন্ন হতো তবে সকল ব্যক্তির চৈতন্য এক হতো, যা কখনই সম্ভব নয়। কাজেই ‘আমি’ ও ‘স্থুল’ একই জিনিস। আর আত্মার অস্তিত্ব যেহেতু নেই তাই পূর্বজন্ম, পরজন্ম, স্বর্গ নরক, পাপ পুণ্যের ফলভোগ ইত্যাদি সবকিছুই অলীক ও অর্থহীন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাক আত্মতত্ত্ব অনুসারে আত্মা দেহেরই মধ্যে চৈতন্যরূপে বিদ্যমান, দেহ ভিন্ন আত্মার অস্তিত্ব নেই।