চার্বাক দর্শনে ঈশ্বর সম্পর্কে লেখ।

অথবা, চার্বাক দর্শনে ঈশ্বর বলতে কী বুঝ?
অথবা, ঈশ্বর সম্পর্কে চার্বাকদের ধারণা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। প্রত্যক্ষই যদি একমাত্র প্রমাণ হয় তাহলে যাকে প্রত্যক্ষ করা চলে তারই সত্তা স্বীকার করে নিতে হয়। ঈশ্বর, আত্মা, স্বর্গ, নরক প্রভৃতির সত্তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না। কারণ এগুলোর কোন সত্তা নেই। বস্তুত জড়বস্তুরই সত্তা আছে। কারণ জড়বস্তু প্রত্যক্ষগোচর।
চার্বাক দর্শনে ঈশ্বর : যেহেতু অতীন্দ্রিয় ঈশ্বর প্রত্যক্ষের বিষয় নয়, সেহেতু ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই। অনুমান অসিদ্ধ, সে কারণে অনুমানের দ্বারাও ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের যদি প্রকৃতই কোন অস্তিত্ব থাকতো তাহলে ঈশ্বর নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করে মানুষের মনে সকল সংশয় দূর করতেন। চার্বাকরা রাজাকেই ঈশ্বর বলে গণ্য করার পক্ষপাতী। লোক সিদ্ধ রাজা পরমেশ্বর। তিনি রাজ্যের শাসক মএকমাত্র মালিক এবং তাঁর কাজ হলো প্রজাদের সুখ শান্তি বিধান করা। বুদ্ধিমান ব্যক্তির কর্তব্য ঈশ্বরের গুণগান না করে রাজ্যের তুষ্টি বিধান করা। প্রশ্ন হলো জগতের সৃষ্টিকর্তারূপে কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় কি? একটি মৃন্ময় ঘটের জন্য যেমন মৃত্তিকারূপ উপাদান কারণের প্রয়োজন, তেমনই একজন নিমিত্তকারণ কুম্ভকারেরও প্রয়োজন। যেহেতু জগতের আকার প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে, তখন জগৎ অবশ্যই অনিত্য ও কার্য, তাতে সন্দেহ নেই। জগৎ যদি কার্য হয় তবে তার অবশ্যই একজন কর্তা থাকবে। কে এই সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর? জড় উপাদান জগতের উপাদান কারণ হতে পারে, কিন্তু একজন নিমিত্ত কারণের অনুপস্থিতিতে, এ জড় উপাদানগুলোর পক্ষে এ বিচিত্র বিস্ময়কর জগৎ সৃষ্টি করা কি সম্ভব? তার উত্তরে চার্বাকরা বলেন, উপাদানের দ্বারাই জগৎ সৃষ্টি এবং এই জগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কোন জগৎ স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুমান করা নিষ্প্রয়োজন। ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চারটি জড় উপাদান নিজ নিজ অন্তর্নিহিত স্বভাব ধর্মবশতঃ ক্রিয়া করে এবং তার ফলে এ জগৎ ও জগতের যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অধিবিদ্যার মূল বিষয় হলো ঈশ্বর। চার্বাকরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন নি। কারণ ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। কিন্তু চার্বাকরা বলেছেন, জড় উপাদান জগৎকে সৃষ্টি করেছে। সুতরাং জগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে চার্বাকরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।