অথবা, শব্দ প্রমাণের বিরুদ্ধে চার্বাকদের অভিযোগ লিখ।
অথবা, শব্দ প্রমাণের বিরুদ্ধে চার্বাকরা কী বলেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতের দার্শনিক চিন্তার মধ্যে আধ্যাত্মিকতার প্রাধান্য বেশি। জড়বাদ হলো আধ্যাত্মিকতার বিরোধী মতবাদ । ভারতীয় দর্শনে এই জড়বাদের প্রচার করেছেন চার্বাক দার্শনিকরা। চার্বাক দর্শন শব্দকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করে নাই। কারণ তার দ্বারা কোন সন্দেহাতীত ও যথার্থ জ্ঞান লাভ করা যায় না।
শব্দ প্রমাণের বিরুদ্ধে চার্বাকদের আপত্তি : ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের অনেকে শব্দ বা আপ্তবাক্যকে একটি যথার্থ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু চার্বাকগণের মতে, শব্দ নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নয়। কারণ শব্দ হলো
বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বচন মাত্র। কোন ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য কি না তা অনুমান করা হয় তার চরিত্র হতে। অনুমান যেখানে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নয়, সেখানে অনুমান নির্ভর শব্দকেও যথার্থ প্রমাণরূপে গ্রহণ করা যায় না। চার্বাকগণের মতে, বেদ বাক্যকেও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। কারণ বেদে এমন অনেক কথা আছে যাহা দুর্বোধ্য। এমনকি বোধগম্য অনেক কথাও আছে যেগুলো পরস্পরবিরোধী এবং বহু অর্থবোধক। বেদের ভাষাও অনেক স্থলে বুঝা যায় না। চার্বাকগণ বলেন, ভণ্ড, ধূর্ত ও নিশাচর এই তিন রকম লোকের দ্বারা বেদ রচিত হয়েছে। ভণ্ড পুরোহিতগণ নিজেদের জীবিকা অর্জনের জন্য বেদে এমন যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠানের উল্লেখ করেছেন, যার অনুষ্ঠান করলে জনসাধারণের কোন লাভ হয় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাক মতে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। অনুমান বা শব্দ কোনটিই যথার্থ প্রমাণ নহে । কারণ শব্দ হলো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বচনমাত্র। তাই শব্দ প্রমাণের বিরুদ্ধে চার্বাকদের আপত্তির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।