প্ৰাণই আত্মা’ চার্বাকদের এ মতবাদ সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, চার্বাকদের প্রাণাত্মবাদ সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, চার্বাকদের প্রাণাত্মবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাকদের প্রাণাত্মবাদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক দর্শনের কোন মূল গ্রন্থ পাওয়া না যাওয়ায় এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠাতা যেই হোক না কেন, চার্বাক দর্শন বলতে মূলত নাস্তিক দর্শন বা জড়বাদী দর্শনকেই বুঝায়। চার্বাকরা প্রত্যক্ষণকেই জ্ঞানের একমাত্র প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এরা ঈশ্বর, আত্মা ইত্যাদির অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন।
প্রাণাত্মবাদ বা প্রাণই আত্মা : ইন্দ্রিয়াত্মবাদ স্বীকার করে নিলে নানা ধরনের অনুপপত্তি ঘটে। প্রথমত, ইন্দ্রিয় যদি আত্মা হয়, এক ব্যক্তি একাধিক ইন্দ্রিয়ের অধিকারী হওয়াতে একাধিক আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়। দ্বিতীয়ত, ইন্দ্রিয় আত্মা হলে স্মরণ, প্রত্যভিজ্ঞা প্রভৃতি সম্ভব হয় না। অথচ এগুলো যে সম্ভব তা সকলেরই জানা। কোন বস্তু দর্শনের পর চক্ষু বিনষ্ট হয়ে গেলেও পূর্বদৃষ্ট বস্তুর স্মরণ সম্ভব হয়। যে বিষয় দর্শন করে তাঁর পক্ষে তা স্মরণ করা সম্ভব। চক্ষু দ্রষ্টা হয়, তাহলে চক্ষুই কর্তা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। তৃতীয়ত, এক একটি ইন্দ্রিয় এক একটি বিষয়কে জানে, যেমন- চক্ষু রূপকে, জিহ্বা রসকে জানে। শ্রবণেন্দ্রিয়ের পক্ষে রূপকে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা বলে থাকি, “যে আমি চক্ষু দিয়ে রূপ প্রত্যক্ষ করি, সেই আমি কর্ণের দ্বারা শ্রবণ করি,” এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার প্রমাণ করে যে ইন্দ্রিয় অতিরিক্ত কোন বস্তু আছে, যা হলো আত্মা, ইন্দ্রিয়গুলো পৃথকভাবে বা সমষ্টিগতভাবে আত্মা হতে পারে না। আত্মা ইন্দ্রিয়ের অতিরিক্ত বস্তু । চতুর্থত, একাধিক ইন্দ্রিয়ের অনুপস্থিতিতেও মানুষ বেঁচে থাকে, প্রাণের কার্য, শ্বাস প্রশ্বাস চলতে থাকে । এসব অনুপপত্তির জন্য একদল চার্বাক মনে করেন প্রাণই আত্মা। ইন্দ্রিয়ের অতিরিক্ত বস্তু যেটি আত্মা সেটি হলো
প্রাণ। ইন্দ্রিয়গুলো নিজের অস্তিত্ব এবং ক্রিয়ার জন্য প্রাণের উপর নির্ভর। ইন্দ্রিয় যদি না থাকে, প্রাণ যদি থাকে তাহলে মানুষের ‘আমি’ বর্তমান থাকে। সুতরাং প্রাণই আমি বা আত্মা। ‘চিরজাগ্রত, অক্লান্তকর্মী, প্রাণই আত্মা’। সম্রাট যেমন তাঁর অধীনস্থ নৃপতিদের কর্ম সুনির্দিষ্ট করে দেয়, প্রাণও তার অধীনস্থ ইন্দ্রিয়গুলোর কর্ম পরিধি সুনির্দিষ্ট করে দেন। ইন্দ্রিয়গুলো
সাধন বা করণমাত্র, প্রাণই ইন্দ্রিয়গুলোর পরিচালক কর্তা। ইন্দ্রিয়গুলো নিজে কর্তা নয়, প্রাণের অধীনতা স্বীকার করে তারা কার্য করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাণের অতিরিক্ত গুণটিই হলো আত্মা, আত্মাই হচ্ছে প্রাণ। তাই নিজের অস্তিত্বের জন্য প্রাণের উপর নির্ভর করতে হয়। প্রাণকে ইন্দ্রিয়ের কর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং চার্বাকদের
মতে, প্রাণই আত্মা এতে কোন সন্দেহ নেই।