চার্বাক দর্শনের উৎপত্তি কীভাবে হয়?

অথবা, চার্বাক শব্দটির উৎপত্তি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, কীভাবে চার্বাক শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে?
অথবা, চার্বাক কথাটির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণ্য গ্রন্থ পাওয়া যায় না। চার্বাক সম্প্রদায়ের মূল গ্রন্থ যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলেও সেগুলো আজ বিলুপ্তপ্রায়। বৌদ্ধ, জৌন ও হিন্দু শাস্ত্রে চার্বাক মতামতগুলো বিক্ষিপ্ত আকারে পাওয়া যায় এবং এসব বিক্ষিপ্ত মতামতগুলো থেকেই চার্বাক দর্শনের পরিচয় সংগ্রহ করতে হয়।
চার্বাক দর্শনের উৎপত্তি : চার্বাক শব্দের মূল অর্থকে কেন্দ্র করে মতভেদ দেখা যায়। কারো মতে, চার্বাক নামে একজন ঋষিই চার্বাক দর্শনের প্রবর্তক। তাঁরই নামানুসারে এ দর্শনের নাম চার্বাক দর্শন হয়েছে। আবার কারো কারো মতে, চার্বাক শব্দটির অর্থ চারু + বাক্ বা মধুর কথা। চার্বাক দর্শন আত্মসুখবাদের প্রচারক এবং তাদের মতে, ইন্দ্রিয় সুখই জীবনের একমাত্র কাম্যবস্তু । ‘যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ অর্থাৎ যতদিন বাঁচ সুখেই বাঁচ, ঋন করেও ঘি খাও এসব মধুর কথা চার্বাক দর্শন সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করতো বলেই এ দর্শনের নাম চার্বাক দর্শন। আবার কারো কারো মতে, ‘চৰ্ব’ ধাতু থেকেই চার্বাক শব্দের উৎপত্তি। চর্ব ধাতুর অর্থ চর্বণ করা, খাওয়া। চার্বাকরা আহার, পানীয় এবং সুখভোগকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করায় এবং ধর্ম, নীতি প্রভৃতিকে অস্বীকার করায় এদের দর্শন চার্বাক দর্শন নামে পরিচিত। জৈন দার্শনিক গুণরত্ম বলেছেন, চার্বাকরা পাপ পুণ্যের মাথা খেয়ে বসেছিল বলেই ওদের নাম ছিল চার্বাক। ব্যাকরণের নিয়মানুসারে চর্ব ধাতু থেকেই চার্বাক শব্দ নিষ্পন্ন হয় না। চারু বাক্ থেকেও নিষ্পন্ন হয় না চার্বাক শব্দ। এ ধরনের কাল্পনিক বুৎপত্তির উদ্দেশ্য চার্বাকদের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্বেষ বা চার্বাকদের সম্বন্ধে একটা বিরূপ মনোভাব প্রচার করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাক মতের প্রবর্তক বৃহস্পতির অন্য নাম চার্বাক। তাই বৃহস্পতির উপদেশ অনুসারী দর্শনকে চার্বাক দর্শন বলা হয়। আবার মতান্তরে ‘চারু’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বৃহস্পতি। তাই
বৃহস্পতির উপদেশকে চার্বাক মত বলা হয়। সুতরাং চর্ব থেকেই চার্বাক শব্দের উৎপত্তি।