অথবা, চার্বাক দার্শনিকরা কেন পরমাণুর অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেন?
অথবা, পরমাণুর অস্তিত্ব সম্পর্কে চার্বাক মত কিরূপ?
অথবা, পরমাণুর অস্তিত্ব অস্বীকার করে প্রদত্ত চার্বাক মতবাদ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে চার্বাক দর্শন এক উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। চার্বাক দর্শন বিশুদ্ধ জড়বাদী দর্শন। সার্বিকভাবে চার্বাক দর্শন তার জ্ঞানতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণিক গ্রন্থ পাওয়া যায় না। কিন্তু রামায়ণ, বেদ, মহাভারত এবং বৌদ্ধ সাহিত্যের বিভিন্ন স্থানে চার্বাক দর্শনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই চার্বাক দর্শন অতি প্রাচীন।
পরমানুর অস্তিত্ব অস্বীকার : ভারতীয় দর্শনে চার্বাক দার্শনিকরা মনে করেন, জড়বস্তুই জগতের আদিসত্তা। জড় থেকেই জগৎ তথা জগতের অন্তর্নিহিত যাবতীয় দ্রব্য এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উদ্ভব হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানে জড়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সূক্ষ্ম কণা তথা পরমাণুর অস্তিত্বের কথা স্বীকার করা হয়। কিন্তু চার্বাক দার্শনিকরা জড়বাদী হলেও পরমাণুবাদী নয়। কারণ তারা পরমাণুর অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেন নি। তাদের মতে, পরমাণুর নামে আমরা বস্তুর যে সুক্ষ্ম কণার কথা বলি তা প্রত্যক্ষের বিষয় নয় অর্থাৎ করা যায় না বলে তারা পরমাণুর অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করেন না। চার্বাক দার্শনিকরা বলেন,
কোন কিছুতে অস্তিত্বশীল হতে হলে তা প্রত্যক্ষলব্ধ হতে হবে। আর বিশ্বজগতের দিকে তাকালে আমরা যেসব জিনিসের অস্তিত্ব অনুভব করি সেগুলো হলো-ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষের সাহায্যে জড়জগতের এ চারটি জিনিসের অস্তিত্বই অনুভূত হয়। চার্বাকদের মতে, এই চতুর্ভূর্তের দ্বারাই জগৎ এবং জগতের যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টি হয়। এই চতুর্ভূত নিজেদের স্বাভাবিক ধর্ম এবং ক্রিয়া অনুসারে পরস্পর মিলিত হয়ে জগতের সৃষ্টি করেছে। চার্বাকগণের মতে, জগতে কেবলমাত্র এই চতুর্ভূতই নিত্য ও অবিনাশী। জগতের সবকিছুই প্রকারান্তরে এই চতুর্ভূত থেকেই উদ্ভব হয়েছে। আর এই চতুর্ভূতের বিশ্লেষণ থেকে কোথাও আমরা পরমাণুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করতে পারি না। আর যেহেতু পরমাণুরূপ কোন কিছুর অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করা যায় না। তাই চার্বাক দার্শনিকরা পরমাণুর অস্তিত্বের কথা অবিশ্বাস করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পরমাণু অস্তিত্ব সম্পর্কিত চার্বাক দার্শনিকদের মতবাদের নানা ত্রুটির কথা বলা হলেও তাদের মতবাদকে কোন মতেই গুরুত্বহীন বলা যায় না। তাঁরা তাদের মতবাদে প্রত্যক্ষের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা মনে করে, যেসব জিনিসকে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায় তার অস্তিত্ব আছে আর যাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না তার অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় না।