অথবা, ভারতীয় দর্শন নিশ্চল কি না আলোচনা কর।
অথবা, ভারতীয় দর্শন কি গতিহীন? সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, ভারতীয় দর্শন কি নিশ্চল?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ হলো, এ দর্শনে একই বিষয়ের গতানুগতিক আলোচনাই দৃষ্ট হয়। চিন্তার ক্ষেত্রে কোন অভিনবত্বের বিকাশ নেই। কিন্তু তা সত্য নয়।
ভারতীয় দর্শন গতিহীন/নিশ্চল : ভারতীয় চিন্তাধারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভারতীয় দার্শনিকরা অতীত ও প্রাচীনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভারতীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্য হলো অতীত এবং পুরাতনের মধ্যে যা ভালো তা গ্রহণ করা এবং পুরাতনের সাথে নতুনের সংযোগ সাধন করা। নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক মতবাদ ভারতীয় দার্শনিক মতবাদের বিরোধীতা না করে অনেক ক্ষেত্রে তা সমর্থনই করেছে। ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতির পথে অবশ্য কিছুটা নিশ্চলতা দেখা যায়। যেমন- ভারতীয় দর্শনের ভাষ্য রচনার কাজ যখন সমাপ্ত হয়েছে, তখন চিন্তার ক্ষেত্রে কিছু নির্জীবতা দেখা দিয়েছিল। আবার ভারতের স্বাধীনতা লুপ্ত হওয়ার জন্য বেশ কিছুদিন সক্রিয় হওয়ার জন্য ভারতের চিন্তার ভাণ্ডার নতুন সম্পদে পূর্ণ হতে পারে নি। অবশ্য পরবর্তীকালে শ্রী অরবিন্দ ও অন্যান্য দার্শনিকদের নতুন চিন্তাধারা, ভারতীয় দর্শনের এই নিশ্চল অবস্থার অবসান করে ভারতীয় চিন্তাধারাকে পুনরায় গতিশীল করেছে। যেহেতু ভারত বর্তমান স্বাধীন এবং স্বাধীন চিন্তাধারা বিকাশের সম্ভাবনা প্রচুর; সেহেতু আশা করা যায় যে, ভারতীয় দার্শনিকরা যদি অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগ বজায় রাখেন, নতুন চিন্তাধারাকে বরণ করে নেবার উদারতা যদি তাদের থাকে এবং সর্বশেষে সত্য উপলব্ধির আকাঙ্ক্ষা যদি তাদের মধ্যে জাগরুক থাকে তাহলে ভারতীয় দর্শন
সাময়িক নিশ্চলতা বা গতিশীলতা থেকে মুক্ত হয়ে নতুন সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনকে নিশ্চল বা গতিহীন বলা ঠিক হবে না। কারণ এ দর্শনের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ ও বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।