দৰ্শন, ফিলোসফি ও হিকমত শব্দ তিনটি কি একই অর্থ বহন করে? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

অথবা, দর্শন, ফিলোসফি ও হিকমত শব্দ তিনটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
বাংলায় দর্শন, ইংরেজিতে ফিলোসফি ও আরবিতে হিকমত কথা তিনটি সাধারণত একই অর্থ বুঝাবার জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদের প্রকৃতিতে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। তা সত্ত্বেও অধিকাংশ পণ্ডিত সব রকম দর্শনের মধ্যে একটা সার্বজনীনতা আছে বলে স্বীকার করেন।
দর্শন, ফিলোসফি ও হিকমত শব্দের অর্থ : ইংরেজি Philosophy কথাটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Philos’ ও ‘Sophia’ থেকে। Philos অর্থ অনুরাগ আর Sophia অর্থ হলো জ্ঞান (knowledge) বা প্রজ্ঞা (wisedom)। তাই

Philosophy শব্দের অর্থ হলো ‘জ্ঞানের বা সত্যের প্রতি অনুরাগ (Love of wisedom)।
দর্শন কথাটি সংস্কৃত দৃশ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো দেখা। আবার ‘দেখা’ বলে শুধু ইন্দ্রিয়জ প্রত্যক্ষণকে না বুঝিয়ে ধারণাগত জ্ঞানকেও বুঝানো হয়। পারিভাষিক অর্থে দর্শন হলো চিন্তার সাথে স্বজ্ঞামূলক বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রাপ্ত ও যুক্তির দ্বারা সমর্থিত জ্ঞান। ব্যুৎপত্তিগত অর্থের দিক থেকে বিচার করলে দর্শন আর ফিলোসফি এক জিনিস নয়। পাশ্চাত্য দর্শন বা ফিলোসফি হলো বুদ্ধির আলোকে সত্যের অনুসন্ধান, বিস্ময়প্রসূত কৌতূহলের পরিতৃপ্তি সাধন। কিন্তু প্রাচ্য দর্শন সব সময়ই সত্যের ব্যবহারিক প্রয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করে। তাই এ দিক থেকে আধ্যাত্মিক সত্যকে দেখা ও সত্যের স্বরূপ উপলব্ধি করাই হলো দর্শন। তত্ত্বদর্শন সত্যের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি। দার্শনিককে কেবল তত্ত্বজ্ঞানী হলেই চলবে না, তাকে তত্ত্বাদর্শীও হতে হবে। আর এখানেই ফিলোসফি ও দর্শনের মূল পার্থক্য। হিকমত বা মুসলিম দর্শনের অর্থ আরো কিছুটা গভীরতা প্রকাশ করে। তবে ভারতীয় দর্শনের সাথে এর লক্ষ্যের দিক দিয়ে মিল রয়েছে। মুসলিশ দর্শনও জগৎ ও জীবন নিয়ে আলোচনা করে, তবে এ দর্শনের মূল লক্ষ্য নাজাত বা মুক্তি। আবার ভারতীয় দর্শনের মূল লক্ষ্য মোক্ষ বা মুক্তি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দর্শন, ফিলোসফি ও হিকমত এর মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও সামঞ্জস্যও আছে । প্রাচ্য দর্শন যেমন, দর্শন ও হিকমত এর মূল লক্ষ্য হলো মোক্ষ, মুক্তি বা নাজাত। কিন্তু পাশ্চাত্য দর্শনের মূল লক্ষ্য হলো জ্ঞান। তবে গ্রিক দর্শনে আমরা নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায়বিচার, এগুলোকে দেখি। অর্থাৎ ‘মুক্তির অপর দিক
হলো সুষ্ঠু জীবন’— এটাই সকল দর্শনের মূল ভাবনা।