দর্শন সম্পর্কে ভারতীয় দার্শনিকগণের মত মূল্যায়ন কর।

অথবা, ভারতীয় দার্শনিকগণ দর্শন সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন?
অথবা, দর্শন সম্পর্কে ভারতীয় দার্শনিকরা কী ধারণা পোষণ করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
অখণ্ড জগৎ সম্পর্কে মৌলিক চিন্তা দ্বারা যাবতীয় সমস্যার সমাধানই দর্শনের মূল লক্ষ্য। ভারতীয় দার্শনিকগণও দর্শনকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করেছেন।
দর্শন সম্পর্কে ভারতীয় দার্শনিকগণের মত : জগৎ ও জীবনের মৌলিক সমস্যাবলি সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন ও এসব সমস্যাবলির উত্তর অনুসন্ধানকে দর্শন বলা যায়। আবার জগৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিই চিন্তা ও সমস্যার মৌলিকতার কারণ। তাই ভারতীয় দার্শনিকগণও জীবন ও জগৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত পাথর্কের কারণে জগৎ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা বা দর্শন সম্পর্কে বিভিন্ন মত পোষণ করতে বাধ্য হয়েছেন। নিম্নে দর্শন সম্পর্কে বিভিন্ন ভারতীয় দার্শনিকগণের মতবাদ ব্যাখ্যা করা হলো :
জড়বাদী চার্বাকদের মতে, ভোগসর্বস্ব জীবনই একমাত্র কাম্য। কারণ তাঁদের মতে ক্ষণস্থায়ী জড়দেহের পতন ঘটলে আর কিছুই থাকবে না। তাদের দর্শনের দুটি মূলকথা হলো :
“যতদিন বাঁচ, সুখে বাঁচ।” “ঋণ করে হলেও ঘি খাও।” অর্থাৎ জীবন ক্ষণস্থায়ী। মৃত্যুর পরে আর কোন জীবন নেই। তাই যতদিন মানুষ বেঁচে থাকবে সুখ আর আনন্দে বেঁচে থাকা উচিত। বাস্তববাদীরা, ভোগবাদী দুঃখময় জীবন থেকে কামনা বাসনা রহিত জীবনে উত্তরণকে পরম সত্য বলেছেন। বৌদ্ধ দার্শনিকগণ এ মতবাদের অনুসারী। এ দার্শনিকগণ সম্প্রদায়ের মতে, জগৎ দুঃখময়। কামনা বাসনাই দুঃখের কারণ। তাই কামনা বাসনাকে বর্জন করতে পারলেই নির্বাণ.লাভ সম্ভব। যুক্তিবাদীরা, সত্য উপলব্ধির দ্বারা তত্ত্ব সাক্ষাৎ ও মিথ্যাজ্ঞান প্রসূত দুঃখের.অবসানকে দর্শনচর্চার মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করেন। আবার প্রজ্ঞাবাদীরা, শাস্ত্রোক্ত তত্ত্ব সাক্ষাৎকেই শ্রেষ্ঠ লক্ষ্যরূপে চিহ্নিত করেছেন। ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়গুলো দর্শন বলতে জীবনদর্শন বা জীবনের মূল উপলব্ধির আলোকে তত্ত্ব সাক্ষাৎকে বুঝে থাকে। তত্ত্ব সাক্ষাৎ বলতে আবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আধ্যাত্মিক উপলব্ধিকে নির্দেশ করে। এর অর্থ একটি
জীবনাদর্শের আলোকে বর্তমান জীবনের বাইরে একটা মহোত্তম জীবনে উত্তোরণকে বুঝায়। জড়বাদী থেকে আধ্যাত্মবাদী সমস্ত ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায় জীবনের এ মূল্যকে পরমার্থ বলে মনে করেন। এ কারণে ড. রাধাকৃষ্ণন বলেছেন, “A darsana is a spirtual perception; a whole view revealed to soul sense.”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অতি প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভারতীয় দার্শনিকগণ জীবন জিজ্ঞাসার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে যে আস্তিক ও নাস্তিক সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে তাই ভারতীয় দর্শন। এ দার্শনিক উপলব্ধি স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যক্তিগত। তাই এর পরিণতিও বিভিন্নমুখী এবং বিস্তৃত।