কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।

অথবা, কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের ত্রুটিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর ভূমিকা :
কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব অন্যান্য তত্ত্বের ন্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের সমাজবিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এ তত্ত্বটি বেশ জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য। এ তত্ত্ব কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কাঠামো, কার্য
দ্বারা সম্পাদিত হয় তার ভিত্তিতে রাজনীতি ব্যাখ্যা করে তুলনামূলক অধ্যয়ন করার চেষ্টা করা হয়। এ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে ।
কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা (Limitation of structural functionalism) : কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সুবিধার ন্যায় বেশকিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। এসব সীমাবদ্ধতাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সর্বক্ষেত্রে তুলনীয় নয় : অ্যালমন্ড রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও আধুনিকতা বলতে পাশ্চাত্যের মডেলকে বুঝিয়েছেন এবং উন্নয়নশীল সমাজগুলোকে উক্ত মডেলের সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু উন্নয়নশীল সমাজ যেমন উন্নত সমাজের সাথে সর্বক্ষেত্রে তুলনীয় নয় তেমনি উন্নয়নশীল সমাজেও উন্নয়নের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। অ্যালমন্ড এ দিকটি উপেক্ষা করেছেন।
২. আদর্শ ও নেতৃত্বকে অবহেলা : এ তত্ত্বে আদর্শ ও নেতৃত্বের উপাদানকে অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল অপরিসীম 1 সমাজে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক উন্নয়নে এ দুটির গুরুত্ব
৩. ব্যাখ্যার অভাব : অ্যালমন্ড কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যেমন- ব্যবস্থার সংজ্ঞায় ‘আন্তঃক্রিয়ার সমষ্টি’ বলেছেন, কিন্তু আন্তঃক্রিয়ার পূর্ণ তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারেন নি
৪. পরিবর্তনের ব্যর্থতা : এ তত্ত্ব পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ। কেননা এ তত্ত্বে ডেভিড ইস্টার্নের ব্যবস্থা তত্ত্বের মতোই স্থিতিশীলতা, অস্থিতিশীলতা, সংরক্ষণ ও অভিযোজন ইত্যাদি শব্দের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
৫. ইনপুটের অপব্যাখ্যা : ইনপুট কার্যসম্পাদনের যে ব্যাখ্যা অ্যালমন্ড দিয়েছেন তাতে বিভিন্ন স্বার্থবাদী গ্রুপের মধ্যে কোনটি রাজনৈতিক, কোনটি অরাজনৈতিক তা পৃথক করা যায় না। ফলে কিছু প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে যায় ।
৬. সিহানের বক্তব্য : সিহান অ্যালমন্ডের তত্ত্ব সম্পর্কে বলেছেন, অ্যালমন্ডের তত্ত্ব বড়জোর একটি শ্রেণীকরণ পরিকল্পনা অথবা সম্ভবত একটি মডেল, খুব সম্পূর্ণ ও দুর্বল মডেল, যা রাজনৈতিক তথ্য এবং সম্ভবত রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর মানসম্মত পর্যবেক্ষণে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তিনি কোন তত্ত্ব কিংবা সুস্পষ্ট শ্রেণীকরণ পরিকল্পনারও জন্ম দেন নি । তার শ্রেণীকরণও অসম্পূর্ণ।
৭. ইনপুট কার্যাবলির উপর অধিক গুরুত্বারোপ : অ্যালমন্ড তাঁর তত্ত্বে ইনপুট কার্যাবলির উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু আউটপুটের উপর তেমন গুরুত্ব দেন নি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব বিগত কয়েক দশক ধরে সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সমাজ এবং সমাজের রাজনৈতিক বিষয়াবলি বিশ্লেষণে এ তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এসব সীমাবদ্ধতা বেশ জটিলও। এতদসত্ত্বেও তুলনামূলক সমাজ বিশ্লেষণে এ তত্ত্বের সফলতা অনেক বেশি।