জনসংখ্যা সমস্যা কী?

অথবা, জনসংখ্যা সমস্যা বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা :
জনসংখ্যা সমস্যা নয়, সম্পদ এ কথাটি আজ বিশ্বের খুব কম দেশেই গ্রহণযোগ্য। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং এর ফলে সৃষ্ট অন্তহীন সমস্যার কারণে জনসংখ্যা এখন সম্পদ না হয়ে বরং অভিশাপ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা যে কখনও সম্পদ হতে পারে তা ভাবনাও অকল্পনীয়। এখানে উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে এবং সমস্যা হিসেবে জনসংখ্যাকেই চিহ্নিত করা হয় ।
জনসংখ্যা সমস্যা : যে কোন দেশের জনসংখ্যা সে দেশের জন্য সমস্যা কি না তা নির্ধারিত হয় সেদেশের খাদ্য উৎপাদন এবং আয়তনের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কোন দেশের বা এলাকার বাসস্থান এবং খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় জনসংখ্যা যদি অধিক কিংবা কম হয়, তাহলে তাকে জনসংখ্যা সমস্যা বলে। মনে রাখতে হবে যে, অধিক জনসংখ্যাই যে শুধু সমস্যা তাই নয়, বরং কম জনসংখ্যাও কোন কোন দেশের জন্য সমস্যা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী জনসংখ্যা স্ফীতি সম্পর্কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :
প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস (Malthus) এর মতে, “খাদ্য উৎপাদন বাড়ে গাণিতিক হারে এবং জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক হারে।” তিনি বলেছেন, “কোন দেশের জনসংখ্যা যদি সেদেশের কাম্য জনসংখ্যা থেকে বেড়ে যায়, তাহলে তাকে জনসংখ্যা স্ফীতি বলে।” সাবেক বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ম্যাকনামারা (Menamara) জনসংখ্যা স্ফীতি সম্পর্কে বলেছেন, “পারমাণবিক যুদ্ধ ছাড়া বিশ্ববাসীর সামনে অন্যতম যে সমস্যা তা হচ্ছে জনসংখ্যা স্ফীতি ।”
পি. এম. হোজার (P. M. Hovger) এর মতে, “জনসংখ্যা সমস্যা অন্যান্য সকল সমস্যার মত সাধারণ কোন ঘটনা নয়, এটি একটি চলন্ত প্রতিক্রিয়া; যা শুরু হয়েছে অনেক শতাব্দী পূর্বে এবং এখনও সক্রিয় রয়েছে।” ইউনিসেফ (UNICEF) এর পরিচালক জেমস কান্ট (James Cant) এর মতে, “আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো পৃথিবী কিভাবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যাটির মোকাবিলা করবে।”
উপসংহার : উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, কোন দেশের খাদ্য উৎপাদন এবং লোকসংখ্যার মধ্যে যদি তুলনায় অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, তখন তাকে জনসংখ্যা সমস্যা বলে।