অথবা, সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ার কৌশলসমূহ কী কী?
অথবা, সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ার কৌশলগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ায় কী কী কৌশল রয়েছে?
অথবা, সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত কৌশল ব্যবহৃত হয় তা লিখ।
অথবা, সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কৌশলগুলো লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা : সংশোধনমূলক প্রক্রিয়ায় প্রধানত ও একমাত্র কৌশল হচ্ছে ব্যাখ্যাকরণের মাধ্যমে ব্য আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করা এবং তার মধ্যে সমস্যা ও তার সমাধান বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা সৃষ্টি করা। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কিংবা ব্যক্তির জন্য সমাধান পরিকল্পনার উপলব্ধিজনিত প্রয়োগ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অত্যন্ত জরুরি। যেসব আচরণ ব্যক্তিকে অক্ষম করে তোলে সে সম্পর্কেও তার পরিণাম সম্পর্কে ব্যক্তিকে জান প্রয়োজন। এসবই ব্যাখ্যাকরণের মাধ্যমে সম্ভব। ব্যাখ্যাকরণ কৌশল প্রয়োগ বিশেষ কয়েকটি ধাপে হয়ে থাকে।
সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ার কৌশলসমূহ : নিম্নে সংশোধনমূলক সমাধান প্রক্রিয়ার কৌশলও উল্লেখ করা হলো :
১. বিভিন্ন ঘটনাকে যুক্তিসঙ্গত উপায়ে একত্রীকরণ : এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে যেসব কৌশলের আশ্রয় নিতে তা হলো :
ক. ব্যক্তিকে এমনভাবে সাহায্য প্রদান করতে হবে যাতে সে তার সার্বিক আচরণ প্রক্রিয়ায়, ধারণায় প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলোর যুক্তিসঙ্গতভাবে একত্রিত করতে সক্ষম হয়;
খ. যেসব বিষয়ে বা ক্ষেত্রে ব্যক্তি অসচেতন সেসব ক্ষেত্রে সমাজকর্মী সচেতনতা প্রদান করবেন এবং অসচেতন বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট করে ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দিবেন;
গ. ব্যক্তি যাতে স্বীয় ভূমিকা পালন ও পরিবেশের সাথে সম্পর্ক বিষয়ে বাস্তব জ্ঞানার্জন করতে পারে সে ব্যাপারে সমাজকর্মী সাহায্য করবেন।
২. আত্মোপলব্ধিকরণে সহায়তা : ব্যক্তিকে আত্মোপলব্ধিকরণের ব্যাপারে সমাজকর্মী সহায়তা প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীর কৌশলগুলো হবে নিম্নরূপঃ
ক. সমাজকর্মী ব্যক্তির সচেতনতা, পূর্ব সচেতনতা, সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি পূর্ণভাবে উপলব্ধি করার ব্যাপারে ব্যক্তিকে সাহায্য করবেন;
খ. ব্যক্তির আচরণের নেতিবাচক দিকগুলো চিহ্নিত করবেন;
গ. ব্যক্তির আচরণের নেতিবাচক দিকগুলোর তাৎপর্য অনুধাবন করতে সাহায্য করবেন;
ঘ. ব্যক্তিকে সমাজকর্মী এমনভাবে সাহায্য করবেন যাতে সে লব্ধ অভিজ্ঞতা কল্পিত বাস্তব দিকগুলো পৃথক করতে সক্ষম হয়;
ঙ. সমাজকর্মী ব্যক্তিকে এমনভাবে সাহায্য করবেন যাতে সে পরিকল্পিত পরিবর্তনের লক্ষ্যে চলৎশক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়।
৩. উৎসাহ প্রদান : উৎসাহ প্রদানের কৌশলগুলো নিম্নরূপ :
ক. ব্যক্তিকে বিভিন্ন উপায়ে সমাজকর্মী বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিবেন;
খ. এমনভাবে ব্যাখ্যা করবেন যাতে ব্যক্তির স্মরণাতীতকালের ঘটনার সাথে তার বর্তমান মনোভাব ও আচরণের সম্পর্ক বর্তমান অবস্থার উপর অতীতের অবাঞ্ছিত প্রভাব অনুধাবনে উৎসাহ যোগায়;
গ. সমাজকর্মী ব্যক্তিকে কল্পিত ধারণার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সাহায্য করবেন;
ঘ. ব্যক্তির আত্মোপলব্ধি ও আত্মবিশ্বাস যাতে দৃঢ় হতে থাকে এবং তার আদি প্রবৃত্তির সাথে যাতে সংঘাত কমতে থাকে সমাজকর্মীকে সেভাবে সাহায্য করতে হবে।
উপর্যুক্ত উপায়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে আত্মপূর্ণতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং ব্যক্তি আত্মনিয়ন্ত্রণে, আত্মোপলব্ধি অর্জনে ও অক্ষমতার আচরণ সংশোধনে ধীরে ধীরে ক্ষমতা অর্জন করবে।
৪. ব্যক্তির অক্ষমতাজনিত আচরণ নিয়ন্ত্রণ : ব্যক্তির অক্ষমতাজনিত আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে তার অর্জিত জ্ঞান তার
সম্ভাব্য জীবন ব
্যবস্থাতেও কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড. আব্দুল হাকিম সরকার (২০০০ : ১৪২) সমস্যার কারণ ও ফলশ্রুতি, অতীত ও বর্তমান, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলি এবং ইতিহাসের মধ্যে কি যোগাযোগ বিদ্যমান তা নিরীক্ষা করার অভিজ্ঞতা অবশ্যই ব্যক্তির আত্মপূর্ণতার ক্ষমতা, প্রত্যক্ষণ, বিচারবোধ ইত্যাদি জোরদার করে।এতে সার্বিক জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে তার ধারণা ক্রমশ সুষ্ঠু ও বাস্তবমুখী হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি, সংশোধনমূলক প্রক্রিয়ার কলাকৌশল ব্যবহার করে ব্যক্তির আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করা যায়। তাছাড়া ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে তার হারানো ক্ষমতার পুনরুদ্ধার করা যায়। এতে ব্যক্তি আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে পারে এবং তার মধ্যে বাহ্যিক পরিবর্তন আসে। ফলে তার মধ্যে গঠনমূলক ও বাস্তবমুখী পরিবর্তনের সূচনা হয় ।