অথবা, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমধারা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্পত্তির মালিকানা, শ্রম বিভাগ এবং বিনিময় ব্যবস্থা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক। অর্থনৈতিক কাঠামো মূলত সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। মানুষের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে খাদ্য সংগ্রহ, পশুপালন, পশু ও মৎস্য শিকার, কৃষিকাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ঘটে সামাজিক মানুষের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণের তাগিদে। মূলত মানবসমাজের শুরু থেকেই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দেখতে পাওয়া যায়। আদিম সমাজে আধুনিক সমাজের মতো শ্রম বিভাগ নেই বললেই চলে। সে সমাজের পরিবার মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। আদিম সমাজে মানুষ খাদ্যসংগ্রহ, পোশাক পরিচ্ছেদ ও আশ্রয়ের জন্য সমবেতভাবে চেষ্টা করতো। বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সমাধা করার জন্য কালক্রমে মানুষ নানাবিধ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তবে আদিম সমাজে মানুষ ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে না দেখে দলগত স্বার্থকে বড় করে দেখতো। বস্তুত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ পর্যায়ক্রমে ঘটে। প্রথম অবস্থায় মানুষ ফলমূল সংগ্রহ এবং পশুপাখি শিকার করে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতো। তখনো পুরুষ ও নারীর মধ্যে শ্রম বিভাগ ছিল। সাধারণত পুরুষরা শিকার করতো আর নারীরা ফলমূল সংগ্রহ করতো। তখন দলের সবাই এক সাথে খাওয়াদাওয়া
করতো। আর যারা ব্যক্তিগতভাবে শিকার করতো সেক্ষেত্রে তাদের স্ত্রীরা খাবার তৈরি করতো এবং নিজেরাই খেত। এক পর্যায়ে পরিবার বা সম্প্রদায় সমন্বয় তৈরি হয়। তবে তখন পণ্য বিনিময় করার কোন রীতি ছিল না। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিনিময় প্রথা গড়ে উঠে নি। কিন্তু একই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত লোকদের মধ্যে উপহার দেয়া ও আতিথেয়তার রীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু তার অল্প কিছু পরে মানুষের মধ্যে যৌথ মালিকানার প্রচলন শুরু হয়। কেননা তখন তাদের জীবিকার প্রধান উপায় ছিল শিকার নির্ভর। তখন এ শিকারের জন্য কোন বিশেষ স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোন রীতি ছিল না। তারা শিকারের সন্ধানে বিভিন্ন বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো। কালের বিবর্তনে কোন এক স্তরে চাষাবাদের প্রচলন শুরু হয়। প্রথমে ভূমিতে যৌথ মালিকানার উদ্ভব হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন ও সরবরাহ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সুনিশ্চিত হওয়ায় মানুষের সামাজিক জীবনে দেখা দেয় স্থিরতা। তৃতীয় পর্যায়ে সমাজজীবনে স্থিরতার কারণে বিশেষীকরণ শুরু হয়। বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ যেমন- মাটির বাসন তৈরি, কাপড়চোপড় সেলাই, কুটিরশিল্প প্রভৃতির উপর জোর দেয়া হয়। বিশেষীকরণের সাথে দ্রব্য বিনিময় রীতি প্রচলিত হয়। এভাবে নানারকম আচার ব্যবস্থা গড়ে উঠে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, সমাজে যেসব প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তাদের মধ্যে অন্যতম। মানবসমাজের শুরু থেকেই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দেখতে পাওয়া যায়। বস্তুত মানব সংস্কৃতির ভিতর যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। কারণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিবেচনা করা উচিত।