সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী।

অথবা, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি বা স্বরূপ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষ সামাজিক জীব। তাই তারা সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংঘ বা সংগঠনের সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠান শব্দটি দ্বারা সাধারণ অর্থে এ সংগঠনগুলোকেই বুঝায়। সমাজবিজ্ঞানীরা প্রতিষ্ঠান শব্দটি বলতে কতকগুলো পন্থা বা পদ্ধতিকে বুঝায় যেগুলো সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। প্রতিটি সংঘের বা সংগঠনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে হাসপাতাল নামক সংঘের কথা বলা যায়, যার প্রতিষ্ঠান হলো চিকিৎসা পদ্ধতি ।
সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য : সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে এ বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো :
১. সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আচার আচরণ যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো হলো তার উপায় বিশেষ।
২.সমাজের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনভিত্তিক যৌথ কার্যকলাপ সম্পাদন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো এসব যৌথ কার্যকলাপের উপর নির্ভরশীল।
৩.সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর সর্বজনীনতা। কারণ সকল সমাজেই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব লক্ষণীয়।
৪.প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট এবং অনুসরণযোগ্য মানদণ্ড রয়েছে, যা কাজ সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে।
৫.প্রতিষ্ঠানগুলো পালন করা হয় সমাজের অধিবাসীদের প্রাথমিক প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে।
৬.সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায় বর্তমান। সেসব উপায়ের সাথে তুলনামূলক বিচারে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়িত্ব বেশি।
৭.সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকে কিছু কিছু নিয়মনীতি, সংঘবদ্ধ জীবনে তারা তাদের কর্তব্য এব অধিকার সম্পর্কেও শিক্ষালাভ করে। পরিবারেই সবরকম সংস্কৃতির সূত্রপাত হয়।
৮. সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে যেমন প্রতিষ্ঠানগুলো থাকে, তেমনি তার সামনে কতকগুলো প্রতিবিধানেরও ব্যবস্থা বর্তমান থাকে। এগুলো গড়ে উঠে প্রচলিত প্রথা ও মতবাদের উপর ভিত্তি করে।
৯. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কতকগুলো নিয়মকানুন রয়েছে, যা পালন করা প্রতিটি মানুষের জন্য অপরিহার্য।
১০. কতকগুলো প্রতীকী বিষয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকে। এসব প্রতীকী বিষয় যেমন বাস্তব হতে পারে তেমনি অবাস্তবও হতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রত্যয় । উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ সামাজিক মানুষের কালের বিবর্তনে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বা সমকালীন অবস্থা ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে পারে। সুতরাং সামাজিক ব্যক্তিবর্গের সহজাত কিছু আবেগ-অনুভূতি সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।