অথবা, রাজনৈতিক দলের সুবিধাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক দলের কী কী ইতিবাচক দিক রয়েছে? আলোচনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক দলের সুফল আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দল ব্যবস্থা বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার এক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। কার্যত রাজনৈতিক দলের সাহায্যেই দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় এমন কোন সমাজ নেই, যেখানে রাজনীতিবিদ নেই । ক্ষমতা দখলের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করার প্রধান হাতিয়ার হলো রাজনৈতিক দল।
রাজনৈতিক দলের সুবিধা নিম্নে সংক্ষেপে রাজনৈতিক দলের গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সঠিক জনপ্রতিনিধি বাছাই : রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অধিক দল ব্যবস্থার কারণে জনগণের পক্ষে প্রতিনিধি বাছাই করা সহজ হয়। সফল নির্বাচনে জনগণ সঠিকভাবে তাদের জনপ্রতিনিধিদের বাছাই করতে পারে। কিন্তু যদি এ বহুদলীয় ব্যবস্থা না থাকত তাহলে কোনভাবেই এটি নির্বাচন করা সম্ভব হতো না।
২. সমস্যা সমাধানের পথনির্দেশ : রাষ্ট্রের আয়তন ও অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সমাজের সমস্যাবলিও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জীবন সংগ্রামে জর্জরিত সাধারণ মানুষের পক্ষে রাজনীতি বিবর্জিত হয়ে এসব সমস্যার স্বরূপ উপলব্ধি করা যেমন সহজ নয়, তেমনি সেগুলো সমাধানের জন্য পথ অন্বেষণ করাও সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলো অগণিত সমস্যাবলির মধ্যে যেগুলোর আশু সমাধান প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সমাধানকল্পে পথনির্দেশ দেয়।
৩. জনমত গঠন : গণতান্ত্রিক শাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রয়োজনে জনমত গঠন ও প্রকাশ অপরিহার্য। দলপ্রথা জনমত গঠন ও প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া বিভিন্ন সংবাদপত্র, সভাসমিতি, সরকারি যোগ্যতা এবং অন্য উপায়েও দলীয় আদর্শ প্রচার করে থাকে।
৪. সরকারের স্বৈরশাসন রোধ : নির্বাচনে যে দল আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সে দলই সরকার গঠন করে। সরকারি দল ক্ষমতাসীন হয়ে যাতে জনস্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপ চালাতে কিংবা স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য বিরোধী দলগুলো সদাসতর্ক প্রহরী হিসেবে কাজ করে।
৫. গণতন্ত্রের স্বকীয়তা সংরক্ষণ : নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমর্থন প্রাপ্ত সরকারি দল জনমতকে বাস্তবে কার্যকরী করার জন্য আত্মনিয়োগ করে এবং গণতান্ত্রিক আদর্শ ও স্বরূপ সংরক্ষণ করে থাকে।
৬. রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তার : গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকায় জনসাধারণের মধ্যে অতি সহজেই রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তার ঘটাতে পারে। নিজ নিজ দলীয় নীতি ও কর্মসূচিকে সঠিক বলে প্রমাণ করে প্রতিটি দল ব্যাপকভাবে দলীয় প্রচারকার্যের মাধ্যমে দলের অনুকূলে জনমত গঠন করতে প্রচেষ্টা চালায়।
৭. শাসনব্যবস্থায় উন্নয়ন : আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে সামাজিক ব্যবস্থায় ক্রমোন্নতির প্রতিটি স্তরে শাসনব্যবস্থায় উন্নয়ন অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব। দল ব্যবস্থাই এরূপ নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই উপযুক্ত নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তির সৃষ্টি হয় ।
৮. শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন : দলীয় ব্যবস্থা থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের পরিবর্তন সাধিত হতে পারে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, রাজনৈতিক দল দেশের জনগণের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এরা সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। – জনগণের বিভিন্ন সমস্যাবলি সম্পর্কে সরকারকে অভিহিত করে তার সমাধান ও জনগণের অভাব অভিযোগের নিরসনের জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ফলে জনস্বার্থ সংরক্ষণে
সরকার বাধ্য হয়।