অথবা, গিল্ড প্ৰথা বলতে কী বুঝ?
অথবা, গিল্ড প্রথার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, গিল্ড প্রথা কাকে বলে।
উত্তর৷ ভূমিকা : গিল্ড প্রথা মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় সামন্ত সমাজব্যবস্থার মধ্যে গড়ে উঠে। গিল্ড মূলত একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। মধ্যযুগে সমগ্র সামন্ততান্ত্রিক ইউরোপের শহরগুলো উত্তরোত্তর স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে থাকে এবং সমগ্র শহরের অধিবাসীরা ক্রমশ একটি সুস্পষ্ট সামাজিক শ্রেণিরূপে আত্মপ্রকাশ করে। এরা মূলত শিল্প ও বাণিজ্যের সাথে সংশিষ্ট ছিল । তারা নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির লক্ষ্যে যে সংঘ সৃষ্টি করে তাই গিল্ড নামে পরিচিত।
গিল্ড প্রথা (Guild system) : মধ্যযুগে ইউরোপের সামান সমাজব্যবস্থায় গিল্ড প্রথা গড়ে উঠে। গিল্ড মূলত একটি অর্থনৈতিক সংগঠন। বিভিন্ন পেশার লোকদের সমন্বয়ে এটি গড়ে উঠেছিল। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার গিল্ডকে অর্থনেতিক সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে ও এর সামাজিক প্রেক্ষাপটকে সংশিষ্ট করে গিল্ড প্রথা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন । এ গিল্ডের মূল দায়িত্ব ছিল মালিক-শ্রমিক বিষয়ক যাবতীয় সমস্যার সুরাহা, মূল্য ও মজুরি নির্ধারণ, উৎপাদন ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায় সংক্রান্ত নিরপেক্ষ ব্যবহারিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রতিটি সদস্যের পরিবারের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। গিল্ডের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার বলেছেন, “A guild is an organization of craft workers specialized in accordance with the type of occupation.”
গিল্ড প্রথার উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা এটিকে দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা :
কারিগর গিল্ড (Artisan guild)।
১. বণিক গিল্ড (Merchant guild) এবং ২.
১. বণিক গিল্ড (Merchant guild) : বণিক গিল্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্দিষ্ট অঞ্চলে একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার নিশ্চিত করা। মোটামুটিভাবে স্থানীয় বণিকদের মধ্যেই এ সংঘের সদস্যপদ সীমিত থাকত। শহরের যে কোন রপ্তানির একচেটিয়া অধিকারের ফলে তা আপন ইচ্ছানুযায়ী যে কোন মান চাপিয়ে দিতে পারত। মাপ ও বাটখারার বিষয়েও এ সংঘ তদারক করতো।
২. কারিগরি গিল্ড (Artisan guild) : বাণিজ্য প্রসারের ফলে শহরসমূহে একটি কারিগরি শ্রেণি আত্মপ্রকাশ করে। বিভিন্ন পেশার কারিগরগণ সংগঠিত হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে কারিগরি গিল্ডের উৎপত্তি হয়। এরও উদ্দেশ্য একই প্রকার ছিল । অর্থাৎ ব্যবসায়ের একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নিজস্ব ব্যবসায়িক নিয়মনীতি প্রয়োগ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গিল্ড একটি অর্থনৈতিক সংগঠন। মধ্যযুগের অর্থাৎ ১৪ শতকে ইউরোপের সামন্ত সমাজব্যবস্থায় এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের সমন্বয়ে এটা গড়ে উঠেছিল। প্রথমদিকে এ প্রথা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তীতে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।