প্রাক-ব্রিটিশ বাংলার মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থা কেমন ছিল?

অথবা, প্রাক-ব্রিটিশ বাংলার মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ কাঠামো বলতে বুঝায় ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির এবং ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ককে যেমন- অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি মিলে সমাজ কাঠামো গড়ে উঠে। প্রাক ব্রিটিশ ভারতের সমাজ কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আলোচনা করা আবশ্যক। আর প্রাক ব্রিটিশ ভারতের সমাজ কাঠামোর মূল একক হলো স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম সম্প্রদায়। সমাজবিজ্ঞানী নাজমুল করিম বলেন, “ভারতীয় সামাজিক প্রপঞ্চ এবং কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে একে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে।”
মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থা : প্রাক ব্রিটিশ বাংলার দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল। যথা :
ক. মুদ্রা ব্যবস্থা ও খ. দ্রব্য বিনিময় ব্যবস্থা। মুদ্রা বলতে সাধারণত এমন একটি ধাতুখণ্ডকে বুঝায়, যার একটি নির্দিষ্ট ধাতব বিশুদ্ধি এবং নির্দিষ্ট তৌলরীতি বিদ্যমান। এমন ধাতুখণ্ড যখন বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ও ব্যবহৃত হয় তখন তা মুদ্রা বলে গণ্য হয়। মুদ্রার দুটি রূপ বিদ্যমান-ধাতব মুদ্রা ও কাগজি মুদ্রা। তখনকার সময়ে মহাস্থানগড়ে ‘অশ্বচিহ্নিত’ যে রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া গেছে তা বাংলার প্রথম মুদ্রা। গৌড়ের শশাংকের পর যে স্বর্ণমুদ্রা প্রচলিত হয়, তা ছিল নিম্নমানের। বিনিময় ব্যবস্থার আর একটি অন্যতম মাধ্যম হলো দ্রব্য বিনিময় প্রথা। প্রাক ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ সমাজ মূলত কৃষক ও অকৃষক এ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। অকৃষক সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল বিভিন্ন কারিগরি শ্রেণি, মিস্ত্রি, তাঁতি, জেলে,
কামার, কুমার, নাপিত, ধোপা ইত্যাদি। তখনকার সময়ে ফসল তোলার মৌসুমে কৃষকের নিকট হতে বিভিন্ন পেশাজীবী ও কারিগরি শ্রেণি তাদের পাওনা বাবদ উৎপাদিত ফসলের একাংশ নিয়ে যেত। এভাবে প্রাক ব্রিটিশ ভারতে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম ব্যবস্থা গড়ে উঠে এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য এলাকা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ব্যবসায় বাণিজ্য : প্রাচীনকাল হতেই বাংলা ব্যবসায় বাণিজ্য ও কারুশিল্পের জন্য সুপরিচিত ছিল। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক এ দু’ ধরনের বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রাক ব্রিটিশ ভারতে প্রচলিত ছিল। এখানে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায় বাণিজ্যে দুটি ভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত। যথা : নগর ও মফস্বলকেন্দ্রিক।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ব্রিটিশ অধিকারের পূর্বে বহু শতাব্দী ধরে ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে পরিবার ও গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ছিল। অথচ সেখানে অর্থনৈতিক কাঠামো অনেকটাই জাতি পরিবার ও গ্রাম পঞ্চায়েতের কারণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় ছিল, যার কারণে অর্থব্যবস্থা স্থবির, নিশ্চল ছিল।