দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দলকে আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
জন্মের পর থেকে মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে অভ্যস্ত। এ কারণে মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে গণ্য করা হয়। মানুষের পক্ষে কখনো একা বসবাস করা সম্ভব নয়। প্রত্যেক মানুষই কোন না কোন দলের সদস্য। কেউবা আবার একাধিক দলের সদস্য হতে পারে। কেউ কেউ দলে সক্রিয় ভূমিকা রাখে, আবার কেউবা দলে খুবই নিষ্ক্রিয় থাকে । এ দলগুলো বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র হতে পারে।
দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ : একাধিক ব্যক্তি যখন কোন লক্ষ্য অর্জনে একত্রিত হয় এবং পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া করে তখন তাকে দল বলে। দলের সদস্যরা নিজেদেরকে একটি সামাজিক একক হিসেবে চিহ্নিত করে। বাস্তবক্ষেত্রে দলের অনেক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় । এগুলো দলকে স্বতন্ত্র ও বিশেষ পরিচিতি দান করে। নিম্নে দলের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া (Mutual interaction) : সদস্যদের পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া দলের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া ও মনোভাব বিনিময়ের মাধ্যমে সদস্যরা একে অপরের কাছাকাছি আসে এবং ঘনিষ্ঠ হয়।
২. কার্যাবলি (Activities) : বেশিরভাগ দলই কিছু না কিছু কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। কার্যদল (Work groups) বিভিন্ন কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। বন্ধুত্বমূলক দল (Friendship group) সামাজিক সম্পর্ক রক্ষায় কাজ করে। তারা একত্রে বেড়াতে যায় এবং একসাথে খাওয়াদাওয়া করে। দলকে অবশ্যই সক্রিয় হতে হয়। তবে দলের সব সদস্যদের সক্রিয় হওয়া আবশ্যক নয়। কেউ কেউ সক্রিয় থাকতে পারে, আবার কেউবা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে।
৩. সাধারণ লক্ষ্য (Common goal) : যে কোন দল গঠনের নেপথ্যে কিছু সাধারণ লক্ষ্য থাকে। এসব লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কার্যসম্পাদন, কার্যপরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার, সদস্যদের সামাজিক অভাব পূরণ, আচরণের দিকনির্দেশনা প্রদান ইত্যাদি।
৪. সংযোগশীলতা (Cohesion) : সংযোগশীলতা দলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। দল যত বেশি তার সদস্যদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে, দলের প্রতি সদস্যরা তত বেশি আকর্ষণ অনুভব করবে। এরূপ আকর্ষণবোধকেই সংযোগশীলতা বলা হয় । দলীয় সংযোগশীলতার ফলে সদস্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একই অবস্থান গ্রহণ করে।
৫. নিয়ম বা আদর্শ (Norms) : প্রত্যেক দলের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বা আদর্শ থাকে। এ নিয়মাবলি দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা এবং সদস্যদের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য।
৬. অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্ব (Informal leadership) : দলের সদস্যদের মধ্য থেকে একজন নেতা নির্বাচিত হন। বয়স, অভিজ্ঞতা, কারিগরি জ্ঞান ইত্যাদি বিবেচনায় সদস্যদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত হয়ে থাকেন। নেতার কোন আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা থাকে না, কিন্তু তিনি সদস্যদের কাছ থেকেই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দলের মধ্যে একাধিক নেতা থাকতে পারে।
৭. উপদল (Sub group) : স্বার্থজড়িত বিভিন্ন বিষয়ে দলের মধ্যে অনেক সময় দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উপদলের সৃষ্টি হয়। উপদলের উপস্থিতি দলের শক্তি খর্ব করে।
৮. অংশগ্রহণ (Participation) : দলগত কাজ করার জন্য সদস্যদের আগ্রহ ও প্রস্তুতিকে অংশগ্রহণ বলে। এরূপ অংশগ্রহণ সদস্যদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগায় এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ হ্রাস করে।
৯. সামঞ্জস্যতা (Confirmity) : ব্যক্তিক ও দলীয় লক্ষ্যের সামঞ্জস্যতাকে দলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা যায়। এ দুটি বিষয়ের মধ্যে মিল বা সামঞ্জস্য থাকলে দলীয় সংঘবদ্ধতা দৃঢ়তর হয়।
১০. প্রকারভেদ (Types) : দল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যথা : প্রাথমিক দল, মাধ্যমিক দল, আনুষ্ঠানিক দল, অনানুষ্ঠানিক দল, সমস্যা সমাধানকারী দল, সৃজনশীল দল, রেফারেন্স দল ইত্যাদি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, দল হচ্ছে ব্যক্তির সমন্বয়। সমাজব্যবস্থার একটি অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো দল। এ কারণে সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায়ও এর গুরুত্ব সুস্পষ্ট। তবে কতিপয় লোকের একক সমাবেশকেই দল বলা যাবে না। দল হতে হলে তার মধ্যে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।