অথবা, সমাজের গোষ্ঠীগত জীবনে সংস্কৃতির কোন ভূমিকা আছে কী?
অথবা, সংস্কৃতির ভূমিকা কোন গোষ্ঠীগত জীবনে কতটুকু?
অথবা, গোষ্ঠীগত সমাজে সংস্কৃতির ভূমিকা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজজীবনে তথা মানবজীবনে সংস্কৃতির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। মানবসমাজে সংস্কৃতির ভূমিকাকে আমরা দুটি দিক থেকে পর্যালোচনা করতে পারি । যথা : ব্যক্তিজীবনে এবং গোষ্ঠীজীবনে সংস্কৃতির ভূমিকা। গোষ্ঠীগত জীবনে সংস্কৃতির ভূমিকা : নিম্নে গোষ্ঠীগত জীবনে সংস্কৃতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. আমরা বোধের সৃষ্টি করে : যে কোন গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি এক আমরা বোধ (We feeling) এর সৃষ্টি করে। গোষ্ঠীর সদস্যদের সবাইকে সংস্কৃতি প্রেম-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। সাংস্কৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত ও উদার হয়। তার ফলে ব্যক্তি মানুষ নিজেকে গোষ্ঠীর অন্যতম অংশ হিসেবে মনে করে।
২. সামাজিক সংহতি সংরক্ষণ : সংস্কৃতি হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শক্তি। সমাজের সংহতি ও শৃঙ্খলা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এ শক্তির অনন্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। পৃথিবীর যে কোন দেশের সমাজব্যবস্থায় সংস্কৃতির এ ভূমিকার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিরোধ বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এভাবে গোষ্ঠীজীবনের অস্তিত্ব অব্যাহত থাকে। সামাজিক সম্পর্ককে সংস্কৃতি
সঠিকভাবে পরিচালিত করে। তার ফলে গোষ্ঠীজীবনের অস্তিত্ব অব্যাহত থাকে।
৩. জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি : সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি জ্ঞানার্জনের আগ্রহ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে। সমাজবদ্ধ মানুষের এ আগ্রহ নিরসনের ক্ষেত্রেও সংস্কৃতি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বস্তুত গোষ্ঠীল সদস্যদের মধ্যে সংস্কৃতি চিন্তাচেতনা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিপ্রেত অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি করে। গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সংস্কৃতি ন্যায়নীতিবোধ, ধর্মবোধ, সৌন্দর্যবোধ প্রভৃতিকে উজ্জীবিত করে ।
৪. সুস্থ গোষ্ঠীজীবন সম্ভব করে : সংস্কৃতি হলো সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধের ধারক ও বাহক। গোষ্ঠীজীবনে ব্যক্তি মানুষের আচারব্যবহারকে সংস্কৃতি যুক্তিসঙ্গত ও দায়িত্বশীল করে তোলে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতির অবদান অনস্বীকার্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রতিটি দিক সংস্কৃতি পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এজন্য পরিবেশ অনুসারে প্রত্যেক সমাজে নিজস্ব সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠে। পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনোভাব রক্ষা করার জন্য গোষ্ঠীগতভাবে মানুষের যে প্রচেষ্টা তা থেকেই মূলত সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে।