অথবা, সামাজিক জরিপের নেতিবাক দিকগুলো আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক জরিপের সীমাবদ্ধতার জায়গাটুকু ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রত্যেক বিজ্ঞানের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি থাকে, যা অনুসরণ করে ঐ বিজ্ঞান তার কার্য সম্পন্ন করে থাকে। সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত জ্ঞান এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। গবেষকগণ গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাত্ত্বিক এবং যৌক্তিক উপায়ে গবেষণার সামগ্রিক বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সামাজিক আচার আচরণ উপলব্ধি করার জন্য সামাজিক সমস্যাবলির সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য সামাজিক গবেষণায় যেসব পদ্ধতির ব্যবহার হয় তার মধ্যে জনপ্রিয় ও ব্যাপক প্রচলিত তথ্যানুসন্ধান পদ্ধতি হলো সামাজিক জরিপ ।
সামাজিক জরিপের সীমাবদ্ধতা বা দুর্বল দিক বা অসুবিধা : বহুল প্রচলিত, উপযোগী ও জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক জরিপ সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত নয়। সংগত কারণে সামাজিক জরিপের যেসব সীমাবদ্ধতা বা দুর্বল দিকসমূহ সমাজ গবেষকগণ উল্লেখ করেছেন সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো :
১. অনির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রাপ্তি : সামাজিক জরিপ পদ্ধতিতে সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ, প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে ভ্রান্ত ও অনির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে গবেষণার ফলাফল সঠিক হয় না।
২. মূল্যবোধের প্রভাব : সামাজিক জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত জরিপলব্ধ তথ্যাবলিতে বিভিন্ন মূল্যবোধের প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে তথ্য প্রদানকারী সঠিক তথ্য দিতে চায় না।
৩. সুগভীর তথ্য না পাওয়া : সামাজিক জরিপের মাধ্যমে সামাজিক উপাদান সম্পর্কিত সুগভীর তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। আর সুগভীর তথ্যের অভাবে সঠিক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় না।
৪. ঐতিহাসিক পটভূমি : সামাজিক জরিপ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলিতে প্রধানত সাম্প্রতিক ও তাৎক্ষণিক ঘটনা বা অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়। কিন্তু এদের ঐতিহাসিক পটভূমি বা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়।
৫. জটিলতা সৃষ্টি : সুবিস্তৃত জরিপ কাজে অপ্রত্যাশিত জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। ফলে সুষ্ঠুভাবে গবেষণা কার্যসম্পাদন করা সম্ভব হয় না।
৬. সাধারণীকরণ : জরিপলব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট কোন সাধারণীকরণ অথবা ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করা সম্ভব হয় না।
৭. ব্যয়বহুল : সামাজিক জরিপে সাধারণত বিরাট অর্থ, সময় ও লোকবল প্রয়োজন হয়। এজন্য সহজে গবেষণা কার্যসম্পাদন করা যায় না।
৮. সাধারণ প্রকৃতির : জরিপলব্ধ তথ্যাবলি সবসময় তেমনটা নির্ভরযোগ্য হয় না, বরং এগুলো অতিমাত্রায় সাধারণ প্রকৃতিরও হয়ে থাকে। ফলে গবেষণার ফলাফল অনেক সময় ভ্রান্ত হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, সামাজিক জরিপ সর্বাধিক জনপ্রিয় ও প্রচলিত তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে এমন কোন দেশ নেই যেখানে সামাজিক জরিপ পরিচালিত হচ্ছে না। যদিও গবেষণার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য দিতে পারে না তথাপি সামাজিক সমস্যার বিভিন্ন দিক, অবস্থা, প্রভাব ও তার প্রতিকার নিরূপণের প্রথম পদক্ষেপ হলো সামাজিক জরিপ।