অথবা, সামাজিক জরিপের ইতিবাচক দিকগুলো আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক জরিপের সুবিধাসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রত্যেক বিজ্ঞানের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি থাকে, যা অনুসরণ করে ঐ বিজ্ঞান তার কার্য সম্পন্ন করে থাকে। সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত জ্ঞান এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। গবেষকগণ গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাত্ত্বিক এবং যৌক্তিক উপায়ে গবেষণার সামগ্রিক বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সামাজিক আচার আচরণ উপলব্ধি করার জন্য সামাজিক সমস্যাবলির সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য সামাজিক গবেষণায় যেসব পদ্ধতির ব্যবহার হয় তার মধ্যে জনপ্রিয় ও ব্যাপক প্রচলিত তথ্যানুসন্ধান পদ্ধতি হলো সামাজিক জরিপ।
সামাজিক জরিপের সবল দিক বা সুবিধাসমূহ বা উপযোগিতা : বর্তমানকালে সামাজিক জরিপের বহুল প্রচলন হওয়ার পিছনে যে বিষয়টি বিশেষভাবে কাজ করছে তা হলো সামাজিক জরিপের সার্থক উপযোগিতা বা সুবিধাসমূহ। সামাজিক, অর্থনৈতিক, চিকিৎসাগত, বাজার ও বিপণনে, সমষ্টিগত, জনমত, রাজনৈতিক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জরিপের সফল ভূমিকা সমাজ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে। সামাজিক জরিপের সফল দিক বা সুবিধাসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. তথ্য সরবরাহ : সামাজিক জরিপ জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও প্রশাসনে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকে। ফলে যে কোন কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
২. ক্ষেত্র প্রস্তুত : সামাজিক জরিপ পরীক্ষামূলক গবেষণার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এজন্য সামাজিক জরিপ গবেষণার সবচেয়ে সহায়ক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৩. নমনীয় নীতি : সামাজিক জরিপ গবেষণায় নমনীয় নীতি বিদ্যমান থাকে। সামাজিক জরিপ সম্পূর্ণ সঠিক বা বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত না দিতে পারলেও একটা মোটামুটি ধারণা দিতে পারে, যা পরিবর্তিত হতে পারে। এজন্য একে নমনীয় নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
৪. সমস্যার সার্বিক দিক জানা : যে কোন সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে গভীর ও সার্বিকভাবে জানা, নির্ণয় ও তার বিকল্প সমাধান নির্বাচনে সহায়তা করে থাকে সামাজিক জরিপ।
৫. তুলনামূলক অনুসন্ধান : সামাজিক জরিপ গবেষণা কাজ পরিচালনার তুলনামূলক অনুসন্ধানে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। এর মাধ্যমে অতি সহজে কোনটা সঠিক বা কোনটা বেঠিক সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
৬. সামগ্রিক অনুসন্ধান : সামাজিক জরিপের মাধ্যমে বিরাট সংখ্যক সামাজিক উপাদান বা তার সম্পর্কের উপর অনুসন্ধান কাজ চালানো সম্ভব হয়। ফলে সামগ্রিক সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়।
৭. সামাজিক পরিবর্তনের ধারা : সামাজিক জরিপ সামাজিক পরিবর্তনের ধারা ও বিশৃঙ্খলার মাত্রা এবং এর কারণসমূহ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে। এজন্য সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবহৃত হয়।
৮. নির্ভরযোগ্য তথ্যাবলি : সামাজিক জরিপের মাধ্যমে নমুনাজ ভ্রান্তি পরিমাপ ও অনমুনাজ ভ্রান্তি যথাসম্ভব কমিয়ে আনা যায় বলে প্রাপ্ত তথ্যাবলি অপেক্ষাকৃত নির্ভরযোগ্য হয়। এর ফলে একটা সুষ্ঠু সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, সামাজিক জরিপ সর্বাধিক জনপ্রিয় ও প্রচলিত তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে এমন কোন দেশ নেই যেখানে সামাজিক জরিপ পরিচালিত হচ্ছে না। মূলত সামাজিক সমস্যার বিভিন্ন দিক, অবস্থা, প্রভাব ও তার প্রতিকার নিরূপণের প্রথম পদক্ষেপ হলো সামাজিক জরিপ ।