অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির কী সুবিধা রয়েছে?
উত্তর৷ ভূমিকা : পরীক্ষণ পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান কাজের একটা নির্দিষ্ট কাঠামো ও স্তর থাকে এর মাধ্যমে একটি চলকের বিভিন্ন মাত্রার প্রভাব অন্য চলকের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়ে উঠে। বর্তমানে সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । সামাজিক বিজ্ঞানিগণ সাধারণত কোন নতুন তথ্য গঠন অথবা প্রচলিত তথ্যের যথার্থতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষণের সাহায্য গ্রহণ করে থাকেন।
S. Chapin ১৯৪৭ সালে বলেন, সহজভাবে পরীক্ষণ হলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কোনকিছু পর্যবেক্ষণ করা।
পদ্ধতির সুবিধা : পরীক্ষণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বেশি ব্যবহৃত হলেও সামাজিক গবেষণায়ও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় : সামাজিক যে কোন দুটি উপাদানের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতি সবচেয়ে উপযোগী অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে স্বাধীন চলক ও নির্ভরশীল চলক পরিমাপ করে অন্যান্য উপাদানের প্রভাব নিয়ন্ত্রিত রেখে চলক দুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্কের ইঙ্গিত করে। সামাজিক বিষয়াবলির মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের উত্তম পদ্ধতি হলো পরীক্ষণ।
২. অনুকল্প যাচাই : মানুষের সহজাত কৌতূহল উদ্ভূত যৌক্তিক অনুকল্পের যথার্থতা যাচাই এ পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়। এ পদ্ধতি দুটি সামাজিক উপদানের মধ্যে শুধু কার্যকারণ সম্পর্কই নির্ণয় করে না, বরং সম্পর্কহীনতা সম্পর্কে প্রমাণ উপস্থাপন করে ।
৩. নিয়ন্ত্রণ : সঠিক পরীক্ষণে যথার্থ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হয়। বিজ্ঞানী এখানে দৈবচয়নের মাধ্যমে সামর্থ্য অনুযায়ী নমুনা গ্রহণ করতে পারেন, বহিস্থ চলকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, স্বাধীন চলকের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এভাবে গবেষণা কাজের সব পর্যায়ে তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বজায় থাকে।
৪. দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণ : এ পদ্ধতির দ্বারা দীর্ঘ সময় নিয়ে ঘটনাকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রস্থচ্ছেদ জরিপ হতে অধিক মাত্রায় সামাজিক ঘটনাবলির পরিবর্তন পরিমাপে সক্ষম।
৫. পুনরাবৃত্তি : সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিকে আলাদা আলাদা দল ও বিষয়ের উপর পুনঃপ্রয়োগ করা হয়। অনেকের ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও জরিপ গবেষণার চেয়ে এ পদ্ধতিতে বার বার পুনঃপ্রয়োগ করা যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কোন তত্ত্ব বা ব্যাখ্যার মধ্যকার কার্যকারণ সম্পর্কে খুঁজে দেখার সর্বোৎকৃষ্ট অনুসন্ধান পদ্ধতি হলো পরীক্ষণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির অনুসন্ধান কাজের কোন কাঠামো নকশা এবং স্তর বা পদক্ষেপ থাকে যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে একটি চলকে বিভিন্ন মাত্রার প্রভাব অন্য একটি চলকের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়ে উঠে। তাছাড়া ব্যবহারিক ক্ষেত্রে জ্ঞানবৃদ্ধি সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ও সম্ভব্যতা যাচাই অথবা, চলমান কর্মসূচি মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষণ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।