অথবা, তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, তত্ত্ব কাকে বলে?
অথবা, থিওরি কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হচ্ছে বিজ্ঞানের ভিত্তি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পরিচালিত সামাজিক গবেষণা তত্ত্বও পদ্ধতিগত দিক থেকে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতার দাবিদার। তত্ত্ব সঠিক ধারণা কেবল বিমূর্ত চিন্তা থেকে উদ্ভূত নয়। প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রপঞ্চ কিভাবে বৈচিত্র্যলীলায় রহস্য সৃষ্টি করছে তা দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন কৌতূহলী
করে তুলছে। এ ভাবনা থেকে তত্ত্বের বিকাশ ।
তত্ত্ব : সামাজিক গবেষণায় তত্ত্ব একটি মৌলিক প্রত্যয়। তত্ত্ব সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করে থাকে। সমাজে এসব ঘটনা ঘটে থাকে তা প্রত্যেকটি এক বা একাধিক তত্ত্বের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে। বিজ্ঞানের অস্তিত্ব যেমন তার অনুসৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর নির্ভর করে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাফল্যও তেমনি তার উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। সেজন্য তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কেবল মৌলিক ধারণা নয়। বরঞ্চ তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চালিকাশক্তি এবং উদ্দেশ্য বটে। সাধারণভাবে তত্ত্বকে অবাস্তব ও কল্পনাধর্মী বলে মনে করা হয়। বৈজ্ঞানিক যুগের প্রারম্ভে তত্ত্ব প্রায়ই কল্পনাশ্রয়ী ছিল । বিজ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে তত্ত্ব ও তথ্যের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং তত্ত্ব অধিক তথ্য নির্ভর হয়েছে। তত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ও ধারণা প্রচলিত আছে। ধ্রুপদী সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে (ডুরখেইম, ম্যাক্স ওয়েবার, মার্কস প্রমুখ) তত্ত্ব হলো অপরীক্ষণযোগ্য বিবৃতির সমষ্টি। বর্তমান কালে সমাজ গবেষকগণ (যেমন- উইলিয়াম, জে. গুড, পল, কে. হেট প্রমুখ) মনে করেন যে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে জড়োকৃত ঘটনার সমষ্টি হলো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে তত্ত্বের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো : সমাজবিজ্ঞানী Turner তত্ত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “কোন সত্যনীতি বা কোন কিছু ঘটনার সাধারণীকরণের লক্ষ্যে সাধারণত তত্ত্ব গঠিত হয়।”
Lund bug এর মতে, “তত্ত্ব বলতে সাধারণ পর্যবেক্ষণযোগ্য কোন একটি প্রক্রিয়া।” আবার Goode and R.K. Hatt তাঁদের ধারণায়, “সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে তত্ত্ব একটি অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম।” সুতরাং তত্ত্বে ধারণাকে উন্নীত করার জন্য সমাজবিজ্ঞানিগণ নিম্নোক্ত তিনটি ধারণার কথা উল্লেখ করেন। যেমন- (১) তত্ত্ব হচ্ছে সাধারণীকরণযোগ্য, (২) তত্ত্বের মাধ্যমে কোন কিছু সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়, (৩) তত্ত্ব অপরাধ বিষয়ের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তত্ত্ব কোন বিষয় বস্তুর ধারণা প্রদান করে বিষয়বস্তুর প্রত্যয়সমূহের ব্যাখ্যাদান করে তথ্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং সর্বোপরি তত্ত্ব আমাদের জ্ঞানের ধারাবাহিকতা ও ভাবের পারস্পর্য রক্ষা করে।