অথবা, কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, সমাজবিজ্ঞানের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বটি কী?
অথবা, মার্কসীয় উদ্বৃত্ত মূল্য বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : যেসব দার্শনিক তাত্ত্বিক আলোচনার দ্বারা মানুষের চিন্তা ও কর্মজগতের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার.করতে সক্ষম হয়েছেন কার্ল মার্কস তাদের অন্যতম। চিন্তাজগতের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনকারী মার্কস ছিলেন একজন দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী। মার্কস শুধু একজন তাত্ত্বিক ছিলেন না। তিনি শ্রমিক আন্দোলনের অংশীদার ছিলেন।
উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব : ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির আর একটি দিক হলো উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব; যাকে মার্কিন শ্রমিক শোষণের আর এক উপায় বলে মনে করতেন। মার্কস এ তত্ত্বের সাহায্যে পুঁজিবাদী সমাজে শোষণ কিভাবে চলে তা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মার্কসের এ উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব তাঁর অর্থনৈতিক তত্ত্বের মূল কথা। উদ্বৃত্ত মূল্য কি? পুঁজিবাদী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক যে শ্রম ব্যয় করে তা দুই অংশে বিভক্ত। এক অংশ শ্রমিক উৎপাদন করে তার মুক্তির সমমূল্যে মূল্য, এটা হলো প্রয়োজনীয় শ্রম। কর্মদিবসের অপর অংশে শ্রমিক উৎপাদন করে উদ্বৃত্ত মূল্য, যা পুঁজিপতিরা আত্মসাৎ করে মাগনায় বা বিনা পয়সায়। এটাই হলো উদ্বৃত্ত শ্রম। শ্রমিকের উদ্বৃত্ত শ্রমের সাহায্যে যে মূল্য সৃষ্টি হয় সেটাই উদ্বৃত্ত মূল্য। উদ্বৃত্ত ও মূল্য হলো শ্রমিকের যে শ্রমের পারিশ্রমিক দেয়া হয় নি তারই ফল। মজুরিতে নিযুক্ত শ্রমিকের পারিশ্রমিকহীন শ্রম দ্বারা সৃষ্ট উদ্বৃত্ত মূল্যই হলো পুঁজিবাদী সমাজের সমস্ত অনুপার্জিত আয়ের উৎস। এ উদ্বৃত্ত শ্রম থেকে যা আসে তাকে বলে মুনাফা। এভাবে শ্রম মূল্য আত্মসাৎ করে পুঁজিপতিরা মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। মার্কস একেই শোষণ বলেছেন, কারণ পুঁজিপতিরা শ্রমিকের কাজ থেকে যা পাচ্ছে তার জন্য পুরো মূল্য দিচ্ছে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বটি সমাজের শ্রমিক শ্রেণির শ্রমের ন্যায় মূল্যের না দিয়ে যে অংশ মুনাফার জন্য জমা রাখে। সুতরাং এটি একটি পুঁজিবাদীদের অনুপার্জিত আয়ের অংশ।