অথবা, মার্কসবাদ কাকে বলে?
অথবা, মার্কসবাদের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, মার্কসবাদ বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : পৃথিবীর শোষণ মুক্তির ইতিহাসে মার্কস আজো অবিস্মরণীয়। মার্কস শুধু তাত্ত্বিক ছিলেন না। তিনি স্বয়ং বহু শ্রমিক আন্দোলনের অংশীদার ছিলেন। মার্কসকে পৃথিবীর গণআন্দোলনের প্রেরণা দাতা বলে গণ্য করা যায়। তিনি তাঁর তত্ত্ব প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্য দিয়ে সমগ্র পৃথিবীর শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণ মুক্তির আন্দোলনে সামিল করার জন্য প্রয়াসী হন।
মার্কসবাদ : মার্কস তাঁর ধ্যানধারণা ও শিক্ষামালা যে সুসংহত তত্ত্ব গড়ে তোলেন তাই মার্কস বাদ নামে খ্যাত। লেলিনের ভাষায়, “মার্কসবাদ হলো মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষামালা।” (Markism is the system of the views and teaching of Marx.) এমিল বানস তাঁর ‘What is Marxism’ পুস্তিকায় বলেন, “মার্কসবাদ হলো আমাদের এ জগতের এবং তারই অংশ মানবসমাজ সম্পর্কে সাধারণ তত্ত্ব। এর নামকরণ করা হয়েছে কার্ল মার্কসের নামানুসারে। মার্কস ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এর সাথে বিগত শতাব্দীর মধ্য ও শেষ ভাগে এ তত্ত্বকে রূপান্তরিত করেন।” ঊনবিংশ শতাব্দীর চল্লিশ দশকে মার্কসবাদের উদ্ভব হয়। মানুষের চিন্তার ইতিহাসে এক অভিনব যুগ সন্ধিক্ষণে মার্কসবাদের জন্ম। মানব যা কিছু সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ অবদান তাকে স্বীকার করে নিয়ে মার্কসবাদের সৃষ্টি। মার্কস মার্কসবাদের মূল স্রষ্টা হলেও বহু তাত্ত্বিক সহযোগিতায় এঙ্গেলস, লেলিন, স্তালিন এবং মাও সেতুং এর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। মার্কসবাদ হলো একটি সমাজ দর্শন। মার্কসবাদের আবির্ভাবের পিছনে যেমন শিল্পবিপ্লব ও শিল্পবিপ্লব জগৎ, আর্থসামাজিক পরিবেশ দায়ী। ঠিক তেমনিভাবে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক পরিবেশের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মার্কসীয় দর্শন একটি বস্তুবাদী দর্শন। আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসে বিশেষভাবে অষ্টাদশ দশকের ফরাসি দেশে মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে কঠোর সংগ্রাম আরম্ভ হয় সেখানে বস্তুবাদকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দর্শনরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মার্কস নিজকেই কেবল অষ্টাদশ শতকের বস্তুবাদের মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি, তিনি তাকে আরো উচ্চতরে উন্নীত করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কসবাদ নিছক একটা তত্ত্ব নয়। এটি কার্যের পথপ্রদর্শক। এটি একটি গতিশীল ধারা, যা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।