সমাজবিজ্ঞান কী একটি বিজ্ঞান?

অথবা, সমাজবিজ্ঞান কী কলা না বিজ্ঞান?
অথবা, সমাজবিজ্ঞান কেন একটি বিজ্ঞান?
অথবা, সমাজবিজ্ঞান আসলেই একটি বিজ্ঞান?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ইউরোপে শিল্পবিপবোত্তর দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং বৈপবিক সমাজ প্রেক্ষাপটে সমাজবিজ্ঞানের জন্ম। সমাজবিজ্ঞান ‘বিজ্ঞান’ কি না তা জানার আগে জানতে হবে বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান কি?
সমাজবিজ্ঞান ‘বিজ্ঞান’ কি না : সমাজবিজ্ঞান একটি যুক্তি তথা বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তার গবেষণার কাজ চালায়, গবেষণার বিষয় নির্বাচন করে, নির্বাচিত বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ করে, তথ্যগুলোর যুক্তিসংগত শ্রেণিবিভাগ করে যে সিদ্ধান্ত বা কল্পনা প্রণয়ন করা হয় তা যাচাই করে দেখার পরেই সমাজবিজ্ঞানে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।
সামাজিক বিজ্ঞানগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের এক একটি দিক পর্যালোচনা করে, যেমন- অর্থনীতি সমাজের আর্থিক দিক। মনোবিজ্ঞান সমাজস্থ মানুষের মন নিয়ে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান সমাজস্থ মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন প্রণালী নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গোটা সমাজকে অধ্যয়ন করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান যে বিজ্ঞান তা নিম্নলিখিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট করা যেতে পারে :
সমস্যা নির্বাচন : সমাজ গবেষণায় সমাজবিজ্ঞান প্রথম সমস্যা নির্বাচনের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা চালায় ।
পর্যবেক্ষণ এবং তথ্যসংগ্রহ : সমস্যা নির্বাচন শেষে পর্যবেক্ষণ করে এবং সে মোতাবেক তথ্যসংগ্রহ করে।
তথ্যের শ্রেণিবিন্যাসকরণ : হীত তথ্যের বিচারবিশেষণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে সারণিবদ্ধ করে।
বিবৃতি তৈরি : নির্বাচিত সমস্যাটিকে সারণিবদ্ধ
প্রক্রিয়ার পর একটি ধারণা বা বিবৃতি প্রদান করে।
যাচাইকরণ : সারণিবদ্ধ তথ্যাবলির উপর ভিত্তি করে যে বিবৃতি প্রদান করা হয় তা প্রাপ্ত তথ্যাবলি দ্বারা সমর্থিত কি না যাচাইয়ের মাধ্যমে সারণিকরণ করা হয়।
ভবিষ্যদ্বাণী করা : সবশেষে কল্পনাটি যদি তথ্য দ্বারা সমর্থিত হয় এবং সাধারণীকরণ সম্ভব হয়, তাহলে গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে সমস্যা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে তা সমাজের পক্ষে কতটুকু এবং বিপক্ষে কতটুকু মঙ্গল অথবা অমঙ্গল ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যেহেতু সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমাজের যাবতীয় বিষয়াবলি যাচাই, শ্রেণিবিন্যাস, সমস্যা নির্বাচন ইত্যাদি বিশেষণ করে থাকে, সেহেতু একে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা যায়।