অথবা, পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলীকরণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলে এদেশে অসংখ্য শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের অবাঙালি মালিক দেশত্যাগ করে। ফলে এসব সম্পত্তির মালিকানা সরকার গ্রহণ করে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলি আইন : মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর এদেশে অবাঙালি লোকদের যেসব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল এগুলো দখলের জন্য সরকার ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি যে আইন করে তা পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলীকরণ আইন নামে পরিচিত। এ আইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তৈরি হয়।
এর মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তি তথা শিল্পকারখানা সরকারের মালিকানায় চলে আসে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলীকরণ আইন ১৯৭২ সালের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশ নামে পরিচিত। এর ধারাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো : দখলীকরণ আইনের ধারা
১. যেসব প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক নেই অথবা ব্যবস্থাপকবৃন্দ বাংলাদেশ পরিত্যাগ করেছেন, সরকার সেসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সরকার মনোনীত ব্যবস্থাপকমণ্ডলী বা প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত থাকবে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির জারীকৃত ১৬নং আদেশ অনুযায়ী পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখল ও বিক্রয়ের অধিকারও সরকারের হাতে থাকবে।
৪. ১৬ নং আদেশ অনুযায়ী সরকার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর সম্পাদিত সম্পত্তি যে কোনো ইজারা বা চুক্তি অযোগ্য বলে বিবেচনা করে। পরিত্যক্ত সম্পত্তির কাছে কেউ কোনো ঋণ পাওনা থাকলে সে বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে সরকারের হাতে দখলি স্বত্ব যাওয়ার পর আদালত নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না। সরকার ভুল করে কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত হিসেবে দখল করলে এর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবে।
৮. শুধুমাত্র পাকিস্তানি পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয়, দেশের সকল নাগরিকদের যে কোনো সম্পত্তি দখলের ব্যাপারেও সরকারকে অনন্যসাধারণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। যুদ্ধ জয়ের পূর্বে পাকিস্তানিরা ২৮৮.৬০ কোটি টাকার শিল্প ইউনিট পরিত্যক্ত রেখে চলে যায়। এগুলো ছিল বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পসমূহের মোট অংশের ৪৭% এবং বেসরকারি খাতের মোট শিল্পের ৭১ ভাগ । তবে এ দখলি আইন বাস্তবায়নে আমলাদের দুর্বলতায় কিছু সম্পদ লুট হয়ে যায়। এর অন্যতম দুর্বল দিক হলো অবাঙালি মালিক উপস্থিত থাকার পরও তার সম্পদ সরকার জাতীয়করণ করে নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের পর দখলীকরণ আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধি অর্জন করে। এ পরিত্যক্ত সম্পত্তি জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় সরকার ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক জাতীয়করণ করে। এ ৬টি ব্যাংক পূর্ব বাংলার মোট ডিপোজিটের ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতো। ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করে।