বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার আলোচনা কর।

অথবা, বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ৯ মাসের যুদ্ধে পাক বাহিনী বাংলাদেশকে একটি বিধ্বস্ত ভূখণ্ডে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশের প্রশাসনিক, সামাজিক, যোগাযোগ ও কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরে কৃষি সংস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার : বাংলাদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক ছিল কৃষির উপর নির্ভরশীল। ফলে বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কৃষকদের পুনর্বাসন : বঙ্গবন্ধু কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কারণ বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি আয় হতো কৃষিখাত থেকে। দেশের অর্থনীতিকে সফল করতে কৃষি সংস্কার ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। ফলে বঙ্গবন্ধু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘরবাড়ি তৈরি, সার, বীজ, হালের লাঙল, কীটনাশক ও গরু কেনার জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ নামমাত্র মূল্য কিংবা বিনামূল্যে প্রদান করেন।
২. কৃষকদের ঋণ মওকুফ : বঙ্গবন্ধু সকল কৃষকদের বকেয়া ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দেন এবং ১০ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা থেকে ঋণী কৃষকদের মুক্তি দেয়। এছাড়া ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন।
৩. পণ্যের ন্যায্য মূল্যনির্ধারণ : ধান, পাট, তামাক ও আখসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে এ সকল পণ্যের ন্যায্য মূল্য ধার্য করে।
. সেচ ব্যবস্থা ও নলকূপ স্থাপন : ২৯০০ গভীর ও ৩০০০ অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা করা হয় কৃষকদের জন্য। এছাড়া ১৯৭৩ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প চালু করেন।
৫. খাদ্য মজুদ গড়ে তোলা : বঙ্গবন্ধুর খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার জন্য ১৯৭২ সালের মধ্যে ১০০টি খাদ্য গুদাম গড়ে তোলেন।
৬. সবুজ বিপ্লবের ডাক : বঙ্গবন্ধু দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এ স্লোগান তিনি বাস্তবায়নে কাজ করেন। বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়নে সবুজ বিপ্লবের ডাক কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছিল।
৭. কৃষিঋণ বিতরণ : বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণ করে কৃষকদের জমির সীমা মাথাপিছু ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকানা সিলিং নির্ধারণ করেন। এ সময় সরকার কৃষকদের মধ্যে ১ লক্ষ বলদ ও ৫০ হাজার গাভী এবং ৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেন। যা কৃষকদের উন্নয়নে সহায়তা করেছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেন যে কৃষকদের উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য তিনি কৃষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কৃষকদের উন্নয়নের সাথে সাথে তিনি ভূমিসংস্কারও গ্রহণ করেন। যা সার্বিকভাবে কৃষির উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করেছিল।