যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে সোনার বাংলা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণ করে মাত্র তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করান। তিনি বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পদক্ষেপ নিয়ে তা
বাস্তবায়নে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব : বঙ্গবন্ধু ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশ পুনর্গঠনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। নিচে এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করা হলো :
১. পুনর্বাসন করা : বঙ্গবন্ধু দেশের কৃষকদের উন্নয়নের জন্য, শরণার্থীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পুনর্বাসনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৪৩ লক্ষ বিধ্বস্ত বাসগৃহ পুনঃনির্মাণ করেন। এছাড়া শরণার্থীদের দেশে ফেরত আনা এবং তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন।
২. কৃষি উন্নয়নে সংস্কার : বঙ্গবন্ধু কৃষকদের উন্নয়নের জন্য সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। ৮৫ ভাগ লোক ছিল কৃষিনির্ভর। ফলে বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নের জন্য পরিবারপিছু ১০০ বিঘা জমির মালিকানা সিলিং নির্ধারণ করেন। এছাড়া ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করেন। কৃষিঋণ থেকে কৃষকদের মুক্তি দেন। সার, বীজ, কীটনাশক, লাঙল, গরু প্রভৃতি বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন। যা ভেঙে পড়া কৃষি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে।
৩. অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনে কৃতিত্ব : বঙ্গবন্ধু ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি শক্তিশালী করতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দেশের প্রধান প্রধান শিল্প, ব্যাংক, বিমা জাতীয়করণ করেন। তিনি সার, কাগজ, চিনি কারখানা স্থাপন করে শিল্প উৎপাদনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে স্বল্প সময়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করে।
৪. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কৃতিত্ব : বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৭৪ সালের মধ্যে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সেতু পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণ করেন এবং অতিরিক্ত ৯৭টি নতুন সড়ক, সেতু নির্মাণ করেন। এছাড়া নৌ বন্দর ও বিমান বন্দরের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
৫. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন : যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড দমন, চুরি, ডাকাতি রোধ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠন করেন। এছাড়া জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কৃতিত্ব রাখেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা, যোগাযোগ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, প্রশাসন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের ফলে দ্রুত দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে। সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয় বাংলাদেশ।