গণপরিষদের ২য় অধিবেশন সম্পর্কে যা জান লিখ।

অথবা, গণপরিষদের ২য় অধিবেশন বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
একটি দেশের পথপ্রদর্শক হলো সংবিধান। এজন্য স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এ দেশের জন্য একটি সুষ্ঠু সংবিধান প্রণয়নে উদ্যোগী হন। কতকগুলো পদক্ষেপের মাধ্যমে সংবিধান গৃহীত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এসে ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থায়ী সাংবিধানিক অধ্যাদেশ জারি করেন। ৪৩০ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়।
গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন : বাংলাদেশে গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর এবং ১৩ অক্টোবর গণপরিষদ কতিপয় সংশোধনী মতে খসড়া সংবিধান কার্যপ্রণালি সংক্রান্ত বিধিমালা গ্রহণ করেন। গণপরিষদে সাংবিধানিক বিলটির উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, “এ সংবিধান শহিদের রক্তে লিখিত।” সে সাথে তিনি আশা করেন যে, এ সংবিধান দেশের সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক বলে বিবেচিত হবে। সংবিধান বিলটি উত্থাপনকালে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, “এ সংবিধান গণতান্ত্রিক উপায়ে এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে এমন এক সমাজব্যবস্থা যাতে আইনের শাসন, মৌলিক মানবিক অধিকার এবং স্বাধীনতা, সাম্য ও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার সকল নাগরিকের জন্য অর্জিত হবে।” খসড়া সংবিধানের প্রথম পাঠ শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৯ অক্টোবর এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। দ্বিতীয় পাঠ চলে ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। তৃতীয় পাঠ শুরু হয় ৪ নভেম্বর এবং ৬৫টি সংশোধনীসহ তা অনুমোদন করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে সংবিধান কার্যকর করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জনপ্রতিনিধিগণ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থায়ী সংবিধান বিধিবদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে আবির্ভূত হয়েছে। তাই ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের সংবিধান বলবৎ ও কার্যকরী হয়েছে। ১টি প্রস্তাবনা, ১১টি বিভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৪টি তফশিল সন্নিবেশিত ছিল এ সংবিধানে।